বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে হাওর এলাকায় কেন এই বিপর্যয়?
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে টিকে থাকা শেষ বাঁধটিও ধসে গেছে এবং বাকি বোরো ধানও তলিয়ে গেছে।
শত শত মানুষ গত কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন বাঁধটিকে বাঁচাতে, কিন্তু অতিবৃষ্টিতে পানির চাপ বেড়ে গেলে তাদের পরিশ্রম ব্যর্থ হয়। ফলে বাকি হাওরগুলোও পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।
প্রতি বছরেই হাওরের বাঁধে এখানে সেখানে ফাটল হয়ে ফসল-হানির কথা শোনা যায়।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি এতটা খারাপ হলো কেন?
সুনামগঞ্জের কৃষক এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু সুফিয়ান, যিনি সম্প্রতি স্থানীয়দের নিয়ে ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন, তিনি জানান সময় মতো বাঁধ নির্মাণ না করার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, “কোনো কোনো বাঁধে কাজই হয়নি। আবার কোনো কোনো বাঁধে কাজ শুরু হয় যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন। একারণে পানি আসা মাত্রই সেই ঢল হাওরের ভেতর ঢুকে পড়েছে।”
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা ছিলো। সময় মতো বাঁধ নির্মাণের কাজ হলে এতো বড়ো বিপর্যয় ঘটতো না।
আবু সুফিয়ান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এবিষয়ে তারা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে বহুবার কথা বলেছেন। সংবাদপত্রগুলোতেও প্রচুর লেখালেখি হয়েছে যে এখন মাটি ফেলা হচ্ছে না। কিন্তু আগাম যদি বন্যা হয়ে যায় তাহলে হাওরগুলো পানির নিচে পুরোপুরি তলিয়ে যেতে পারে।
তিনি অভিযোগ করেছেন, এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্ব দেয়নি।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছরেও এসময় বৃষ্টি হয়, পাহাড় থেকে ঢল আসে কিন্তু বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানিটাই শুধু হাওরের ভেতরে থেকে সামান্য ক্ষতি হয়।
“কিন্তু সময়মতো বাঁধ নির্মিত হলে এতো বড়ো সর্বনাশ হতো না বলে আমার বিশ্বাস।
এর ফলে সবাই নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কোন কৃষকের ঘরে খাবার নেই। আমারই ৫০ বিঘার মতো জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। একটা ধানও আমরা তুলতে পারি নাই।”
জমিতে পানি নেওয়ার জন্যে অনেক কৃষক বাঁধ কেটে দেন- এই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এধরনের বক্তব্যের কোন সত্যতা নেই।
তিনি বলেন, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে ক্ষেতে পানি নেওয়ার জন্যে ছোট্ট নালার মতো করা হয়। এসব জায়গা দিয়ে পানি ঢুকেনি। যারা নালা কেটেছে তারাই নিজেরাই আবার সেসব ভরাট করে দিয়েছে।
আবু সুফিয়ান পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাওর এলাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, খোলা বাজারে সস্তায় খাদ্য বিক্রির উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী ফসল উঠা পর্যন্ত ঋণ আদায় কর্মসূচি বন্ধ রাখতে হবে।
“কালকে শনির হাওর গেলো, আজকে গেলো পাগনার হাওর। আর তো কোন হাওর নাই। সব হাওর চলে গেছে। এই দুটোই বাকি ছিলো। এসব হাওরে যে হাজার হাজার মানুষ কাজ করতো তারাও আজ হতাশ হয়ে পড়েছে।
তারা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে। বিবিসি