গবেষণায় থাকলেও মাঠে নেই ১১৫ উচ্চফলনশীল ধান

গবেষণায় থাকলেও মাঠে নেই উচ্চফলনশীল ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ে ১০-১৫ বছর গবেষণা করে দেশের মাটি ও পরিবেশ উপযোগী ১১৫টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। গবেষণায় প্রতিটি জাতের ধানের ফলন হেক্টরে গড়ে আট থেকে ১০ টন বলা হলেও কৃষক চাষ করে পান হেক্টরে চার টনের সামান্য বেশি। ব্যাপক আয়োজনের সাথে নতুন ধানের জাত উন্মোচন করা হলেও গবেষণা আর মাঠে ফলনের বিস্তর ফারাক। গত ৪৫ বছরে ধানের ১১৫টি জাতের মধ্যে কৃষকের কাছে মাত্র পাঁচটি জনপ্রিয় হয়েছে। বাকিগুলোর কোনো হদিস নেই।

১৯৭২ সাল থেকে দেশি ধানকে উন্নত করে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল (উফশী) জাত উদ্ভাবনের পথে যাত্রা শুরু করেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি ৯৪টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। আর পরমাণু কৃষি গবেষণা সংস্থা-বিনার বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন পানিবায়ুসহিষ্ণু মোট ২১টি ধানের জাত। এর মধ্যে রয়েছে লবণসহিষ্ণু নয়টি, খরাসহিষ্ণু দুটি ও বন্যাসহিষ্ণু চারটি। এ ছাড়া বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিঙ্ক-সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এতগুলো প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে শীর্ষে। কিন্তু এসব জাতের ধানের উৎপাদন কৃষকের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। কৃষক এখনও সেই পূরনো ধানের জাতগুলোই আবাদ করে যাচ্ছেন।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এত এত জাত উদ্ভাবিত হচ্ছে; কিন্তু ব্রি-২৮ ও ২৯ ছাড়া অন্য কোনো জাত কেন মাঠে যাচ্ছে না, তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। উদ্ভাবিত নতুন নতুন ধানের জাত কৃষকের কাছে নিয়ে যেতে সমন্বিত কার্যক্রম নিতে হবে। অঞ্চলভেদে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় জাতগুলো পৌঁছাতে হবে। কম সময়ে বেশি ফলন দেয় এমন জাতের উদ্ভাবন করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, নতুন কোনো জাত সম্পর্কে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলেন, জাতটি আট টন ফলন দেবে; কিন্তু মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ওই জাত থেকে আমরা চার টন ফলনও পাই না। তিনি বলেন, বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কেন ফলন হয় না, তা নিয়েও গবেষণা করা যেতে পারে। তিনি নতুন জাত উদ্ভাবনের নামে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় বন্ধে গবেষকদের কৃষক ও দেশের আবহাওয়া উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবনের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নতুন নতুন ধান উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেন।

ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ৯৪টি জাতের মধ্যে বোরো মৌসুমে বিআর-২৮ ও ২৯ কৃষক চাষ করেন। সারাদেশেই কৃষকের কাছে জনপ্রিয় এ দুটি জাত। আর আমন মৌসুমে বিআর-১১ ও বিআর-৪৯ জাত চাষ করেন তারা। এ জাত দুটির ফলন হেক্টরে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার টন।

এ বিষয়ে কৃষক ফেডারেশনের মহাসচিব কৃষিবিদ আক্তার হোসেন বলেন, ধানের রোগবালাই দমন ও জনপ্রিয় জাতগুলোকে আরও উন্নত করার গবেষণায় মন নেই ব্রির বিজ্ঞানীদের। তারা নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনে বেশি আগ্রহী। অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ এমনও মনে করেন, নতুন গবেষণা প্রকল্প হলে নতুন দামি গাড়ি আসবে; লোকবল নিয়োগের বাণিজ্য হবে; নতুন কেনাকাটা হবে; নতুন নতুন যন্ত্রপাতি কেনা হবে। নতুন প্রকল্পের অর্থ ভাগবাটোয়ারা হবে।’

ব্রির মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর বলেন, ব্রি উদ্ভাবিত ধানের মধ্যে উচ্চফলনশীল ৮৮টি আর হাইব্রিড ৬টি। অল্প সময়ে অনেক বেশি জাত উদ্ভাবন হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৪৩টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষক যে জাতগুলো পছন্দ করে বিএডিসি সেগুলোই নিয়ে যায়। এর বাইরে তারা বীজ সরবরাহ করে না।