১৩ উপজেলার সেচের উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস

১৩ উপজেলার সেচের উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেপুরের ১৩টি উপজেলার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকা খরচে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। ‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এ বিষয়ে একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘যাদের বয়স বেশি, তারা জানেন কুষ্টিয়ায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের কথা। বিশাল সেচ প্রকল্প এখানে ছিল। পাকিস্তানের সময় করা হয়েছিল এ প্রকল্প। এখনও অনেক জমি ওই প্রকল্পের বাইরে আছে। সেখানে আরও ভালো করার প্রয়োজন আছে। এ জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘গভীর নলকূপের যে চাষাবাদ করছি আমরা, সেটা পরিবেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায়। ফলে আমাদের উপরের মাটিও দেবে যায়। ক্ষতি হয়। আমরা চাচ্ছি, গভীর নলকূপ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে। এ জন্য আমরা চাচ্ছি মাটির উপরের পানি… নদী, নালা, পুকুর, বিল, জলাশয় – প্রাকৃতিক পানি প্রথমে যেখানে ধারণ হয়, এসব পানি আমরা বেশি ব্যবহার করতে চাই। তার মানে গভীর নলকূপের জায়গায় আমরা লো লেফট পাম্প ব্যবহার করবো। এটা হলো একটা আইডিয়া এই প্রকল্পের। আরেকটি বিষয় হলো, লো লেফট পাম্প চালানো হয় বিদ্যুৎ দিয়ে। আমরা চাই এখানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে। তাই এই প্রকল্পের একটা উপাদান হলো সৌর বিদ্যুৎ। আমরা অনেক পাম্প বসাবো, তার অনেকগুলো চলবে সৌর বিদ্যুতে।’

প্রকল্পের প্রধান কাজগুলো হলো- ৫১টি খাল ২২০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা। বিদ্যুৎ/সৌরশক্তি চালিত লো-লিফ্ট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন করা ১৩০টি (৫ কিউসেক ২৫টি, ২ কিউসেক ৫০টি, ১ কিউসেক-৩০টি, ০.৫ কিউসেক ২৫টি)। পুরাতন গভীর নলকূপ মেরামত/সংস্কার-৪৮টি। এলএলপি/গভীর নলকূপের ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ ১৭৮টি (১ হাজার ৫০০ মিটারের ৭৩টি, ১ হাজার ২০০ মিটারের ৫০টি, ১ হাজার মিটারের ৩০টি, ৮০০ মিটারের ২৫টি)। ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণ ২২৫টি (প্রতিটি ৬০০ মিটার)। সৌরশক্তি চালিত পাতকূয়া নির্মাণ করা ১৩০টি। ছোট/মাঝারি/বড় আকারের সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ৪৩৫টি (ক্রস ড্যাম/ফুট ব্রিজ, ক্যাটল ক্রসিং) (বড় আকারের-১৫ টি, মাঝারি আকারের ১২০টি, ছোট আকারের ৩০০টি)। প্রি-পেইড মিটার ক্রয় ৫০টি, পাম্প টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন একটি এবং অফিস ভবন নির্মাণ দুইটি (প্রতিটি ৪ হাজার বর্গফুট)।

খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার সদর, কুমারখালী, খোকসা, ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুর; চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর এবং মেহেরপুর জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলো হলো- ২২০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা। ১৩০টি বিদ্যুৎ/সৌরশক্তি চালিত লো-লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন ও প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানির সাহায্যে সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় ৬৫ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ত্বরান্বিতকরণ। সেচ কাজে নবায়নযোগ্য সৌরশক্তির ব্যবহার করা। আধুনিক সেচ প্রযুক্তি প্রয়োগ ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা। প্রকল্প এলাকায় আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন করা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মত হলো ভূ-উপরিস্থ পানির সাহায্যে সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ ছাড়াও নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।