সীতাকুণ্ডে ভূমি নেই ৩শ আদিবাসী পরিবারের

একদা সময় ছিল যখন এদেশের আদিবাসীরাই ছিল প্রকৃত অধিবাসী। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আদিবাসী সম্প্রদায় সমতল ভূমি ছেড়ে ঠাঁই নেন পাহাড়ের অরণ্যে। অথচ দীর্ঘদিন পাহাড়ে বসবাস করেও এখনো তাঁরা ভূমির অধিকার পাননি।

সীতাকুণ্ড পার্বত্য এলাকায় তিন শতাধিক আদিবাসী পরিবারের বসবাস। তবে বেশিরভাগ আদিবাসী পরিবার থাকে উপজেলার ছোট কুমিরায়। এখানে রয়েছে ৮৫টি পরিবার।

এছাড়া উপজেলা সদর মহাদেবপুর পাহাড়ে ৪৫ পরিবার, ছোট দারোগারহাট পাহাড়ে ১৫টি পরিবার, শীতলপুর পাহাড়ে ২৫টি পরিবার, সুলতানা মন্দির পাহাড়ে ২০টি পরিবার, বাঁশবাড়িয়া পাহাড়ে ২২টি পরিবার, শীতলপুর পাহাড়ে ৫০টি পরিবার বসবাস করে। এরা সবাই ত্রিপুরা সম্প্রদায়ভুক্ত। এদের নিজস্ব ভুমি কিংবা পাহাড় নেই। দীর্ঘদিন ধরে অন্যের ভূমি বা পাহাড়ে খাজনা দিয়ে বাস করে আসছেন।

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আদিবাসী ত্রিপুরারা বংশানুক্রমে পাহাড়ে বসবাস করছেন অথচ তাদের ভিটেমাটি রেজিস্ট্রি ও বন্দোবস্তি কোনোটাই পায়নি। সরকার তাদের তাড়িয়েও দিচ্ছেনা। দখলি জায়গা বন্দোবস্তিও দিচ্ছে না। পূর্বপুরুষের বসতভিটে মাটির বন্দোবস্তি অথবা রেজিস্ট্রি পাওয়া সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি এলাকার তিন শতাধিক আদিবাসী ত্রিপুরাদের এখন প্রাণের দাবি। এ ব্যাপারে তারা স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের সাথে মতবিনিময় পর্যন্তও করেছেন। সবাই শুধু আশ্বাসই দিচ্ছেন। কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

কুমিরায় বসবাসরত উপেন্দ্র ত্রিপুরা, মনোহরি ত্রিপুরা, বলরাম ত্রিপুরা জানান, যুগ যুগ ধরে সহস্রাধিক একক জায়গা জবর দখল করে পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসীদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে এক প্রভাবশালী পরিবার। জমিদারি প্রথা শেষ হলেও এখানে জমিদারি স্টাইলে ২০টি আদিবাসী পরিবারকে প্রজা হিসেবে শাসন–শোষণ করা হচ্ছে। তাঁরা আরও জানান, ১৯৯৭ সালে আদিবাসীদের এখান থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আদিবাসীদের আন্দোলন ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা সফল হয়নি।

এই শোষণ–নির্যাতন শুধু কুমিরায় নয়, পাহাড়ে বসবাসরত সব আদিবাসীই একই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। আদিবাসীরা কথিত জমিদারের হাত–পা ধরে আকুনি মিনতি করে খাজনা বাড়ানোর চাপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বলে অনেক আদিবাসী অভিযোগ করেন।

শীতলপুরের শ্রীমতি ত্রিপুরা জানান, আমরা ২৫টি পরিবার চৌধুরীপাড়ার মরহুম আবদুর রহমান চৌধুরীর বাগানে বসবাস করছি। প্রতিদিন তাদের বাগানে জঙ্গল পরিষ্কারের কাজ করতে হয়। তাদের কথামতো আমাদের চলতে হচ্ছে। আমাদের অধিকার বলতে কিছুই নেই। এমনকি নির্বাচনের সময় কাকে ভোট দেব তা–ও তাদের কথামতো দিতে হয়। বিরুদ্ধাচরণ করলে উচ্ছেদ করার হুমকি দেয়।

এ ব্যাপারে সীতাকুণ্ড পৌর মেয়র বদিউল আলম জানান, সরকারি পাহাড় বৈধ–অবৈধভাবে ভোগ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বনায়ন কর্মসূচির নামে পাহাড় দেওয়া হচ্ছে বাঙালিদের। অথচ এসব ভূমিহীন, দরিদ্র আদিবাসীরা সবসময় অবহেলিত থেকে গেছে।