সমস্থ মুসলমানদের “আত তাকউইমুশ শামসী” ব্যবহার করা উচিত

ষ্টাফ রিপোর্টার : বিজ্ঞান মুসলমানদেরই দান। মুসলমানদের থেকেই সকলে জ্ঞান বিজ্ঞান শিখেছে। মুসলমানদের উচিত জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা আরও বাড়িয়ে সেই ধারা অব্যাহত রাখা। পাশাপাশি মুসলমানদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতে মুসলিম বিশ্বের উচিত প্রতিটি দেশে মুসলিম রচিত প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সৌর ক্যালেন্ডার “আত তাকউইমুশ শামসী” অনুসরণ করা। এর আগে প্রবর্তিত সকল ক্যালেন্ডারও অন্য ধর্ম ও জাতির নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতে প্রবর্তন করা হয়েছে।

শুক্রবার(২৪ মে) শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরীর শওকত ওসমান মিলনায়তনে “বিজ্ঞান মুসলমানদেরই দান এবং ‘আত তাক্বউইমুশ শামসী’ ক্যালেন্ডার পরিচিতি এবং তাৎপর্য” শীর্ষক সেমিনার এবং ইফতার মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, মহান আল্লাহপাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন “তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চাঁদকে করেছেন আলোকময় আর তার (হ্রাস বৃদ্ধির) মানযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বৎসর গুণে (সময়ের) হিসাব রাখতে পার। মহান আল্লাহ পাক তিনি এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তিনি নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।”এ থেকে বোঝা যায়, মুসলমানদের চাঁদের ক্যালেন্ডারের (হিজরি ক্যালেন্ডার) পাশাপাশি প্রয়োজন একটি সূর্য ভিত্তিক রচিত সৌরসাল। বর্তমানে ইরান ও আফগানিস্থানে লুনি-সোলার (চাঁদ ও সূর্যের সমন্বয়ে) ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হলেও মুসলমানদের রচিত পূর্ণাঙ্গ সৌরসাল কোন মুসলমান দেশেই প্রচলিত নেই। তাই ঈসায়ী ক্যালেন্ডার যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে নতুন সৌরসাল “আত তাকউইমুশ শামসী” বাংলাদেশ সহ সারা মুসলিম বিশ্বে প্রচলন খুবই জরুরী।

তারা বলেন, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে গড়ে এক বছর সমান ধরা হত ৩৬৫.২৫ দিন কিন্তু বাস্তবে এক সৌর বছর সমান হল ৩৬৫.২৪২২ দিন। ৩২৫ ঈসায়ী সনে রোমান ক্যাথলিক চার্চ ২১ মার্চ, দিন-রাত সমান ঘোষণা দেয়ার পর থেকে প্রতি বছর ১১ মিনিট করে পার্থক্য হতে হতে ১৫৮২ সালে এই পার্থক্য এসে দাঁড়ায় প্রায় ১০ দিন। এই পার্থক্যের কারণে ২১ শে মার্চের পরে পূর্ণ জোছনা (Full Moon) অনুযায়ী ঈস্টার ডে পালনের তারিখটি সরে আসতে থাকে। সে কারণে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি এটি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহন করে এবং ১৫৮২ সালের ৪ অক্টোবর পরিবর্তিত হয়ে ঘোষিত হয় ১৫ অক্টোবর ১৫৮২ সাল। অর্থাৎ এই সংশোধনের মূল কারণটিই ছিল ধর্মীয়। তারপরেও কেবল ধর্মীয় কারণে ৩০০ বছর নন-ক্যাথলিক সম্প্রদায় এটি অনুসরণ করেনি। এমনকি রাশিয়া ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের পর ঈসায়ী ক্যালেন্ডার চালু করে, আর গ্রীস চালু করে ১৯২৩ সালে এবং সবশেষে তুরস্ক চালু করে ১৯২৬ সালে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে প্রথম ইউরোপীয়রাই অনুসরণ করে বলে এটা ইউরোপীয়ান ক্যালেন্ডার ক্যালেন্ডার হিসেবে খ্যাত।

বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে ইরান, আফগানিস্থান, ইথিওপিয়া, নেপাল তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছে। তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া, জাপান নিজেদের মত করে একটা ক্যালেন্ডার ব্যবহার করছে। তাছাড়া ভারত, ইসরাইল, চাইনিজরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যবসায়িক কারণে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে নিলেও নিজ নিজ দেশের প্রশাসনিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কাজকর্ম পালনের লক্ষ্যে তাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে। এই দেশগুলো কেবল তাদের ধর্মীয় উৎসবের তারিখ নির্দিষ্ট করার জন্যই নয় বরং জাতিগত সত্ত্বা বজায় রাখার জন্যেও যার যার নিজস্ব ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে। তাহলে সারাবিশ্বের মুসলমানরা কেন তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য মুসলমান রচিত “আত তাকউইমুশ শামসী” সন ব্যবহার করবে না?

সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিশিষ্ট চাঁদ গবেষক ও ফার্মাসিষ্ট এবিএম রুহুল হাসান। শামসী ক্যালেন্ডার এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন, দৈনিক আল ইহসান এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম, নির্বাহী সম্পাদক মুফতিয়ে আ’যম আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ফাহিম রাসেখ এবং আল্লামা মুহম্মদ আদনান মারুফ প্রমুখ।