শ্রমিক নেই, তবু শ্রম উইং

বাংলাদেশি শ্রমিক নেই, বর্তমানে নতুন শ্রমিক যাওয়ার সুযোগও নেই। তবু থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রম ইউং খুলে শ্রম কর্মকর্তা পাঠিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের আপত্তি সত্ত্বেও এক প্রকার জোর করেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হয়।

একেএম মনিরুজ্জামান নামে ওই কর্মকর্তা দূতাবাসে কর্মরত থাকলেও শ্রম বিষয়ে তার কোনো কাজে সেখানে নেই।

পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডে কয়েক হাজার বাংলাদেশি থাকলেও তারা কেউই শ্রমিক নন, বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য আপাতত কোনো শ্রম কর্মকর্তা সেখানে দরকার ছিল না। দূতাবাস থেকে তেমন কোনো প্রস্তাবও করা হয়নি। তবে বর্তমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশররফ হোসেন যখন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তখন বাংলাদেশ থেকে কিছু মৎস্যজীবী নেওয়ার আগ্রহ দেখায় থাইল্যান্ড। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই তৎকালীন মন্ত্রী থাইল্যান্ডে শ্রম উইং খোলার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি খানিকটা গাছে কাঁঠাল, গোফে তেলের মতোই। পরে থাইল্যান্ডে এদেশ থেকে জেলে পাঠানোর প্রক্রিয়াটি না এগুলেও বন্ধ হয়নি শ্রম কর্মকর্তা পাঠানো। ফলে দূতাবাসের প্রয়োজন না থাকলেও খানিকটা তাড়াহুড়ো করে পাঠানো হয় একেএম মনিরুজ্জামানকে।

জানা যায়, বর্তমানে দূতাবাসের অন্যান্য দায়িত্ব পালনে সময় ব্যয় করে দিন পার করলেও যে কাজে সেখানে গেছেন সেই কাজটিই নেই তার। তবে পরিশ্রমী এই কর্মকর্তা নিজের শ্রম দিয়েই দূতাবাসের পেশাদার কূটনীতিকদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সাবেক মন্ত্রীর সময়ের হওয়ায় কেউই মুখ খুলতে রাজি নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ওই সময়ে প্রবাসী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একদিকে দূতাবাসগুলোতে পেশাদার কূটনীতিক পাঠাতে ব্যস্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অন্যদিকে শ্রম উইংগুলো নিজেদের দখলে রাখতে চায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। থাইল্যান্ডে দ্রুত শ্রম উইং খুলে সেখানে প্রবাসী কল্যাণের কর্মকর্তা দেওয়া ছিল সেই প্রতিযোগিতারই অংশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশে একজন কর্মকর্তার বেতন, ভাতা, বাড়িভাড়া সব মিলিয়ে খরচ নেহায়েত কম নয়। তাছাড়া শ্রম উইং রাখা হয়, যে দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক বেশি থাকে সে দেশে। থাইল্যান্ডে সেই অর্থে কোনো শ্রমিক নেই। আপাতত বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমকি নেওয়ার সম্ভাবনাও নেই। সেখানে একজন কর্মকর্তা পাঠানোটা অর্থের যেমন অপচয়, তেমনি একজন মেধাবী কর্মকর্তার মেধার প্রতি অবিচারও বটে।