লোকসান পূরণের আশায় কৃষক: উঠানে নতুন ধান, মাঠে চলছে আলু রোপন

স্বল্পমেয়াদি জাতের আমন ধান কর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আগাম আলু রোপণের ধুম পড়েছে তিস্তার চরাঞ্চলসহ রংপুর অঞ্চলে। বিশেষ করে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে সময়ের আগে আলু রোপণকে ঘিরে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে মাঠজুড়ে।
কৃষি বিভাগ জানায়, রংপুর অঞ্চলে রবি মৌসুমের অর্থকরী ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আলু। এ ছাড়া রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায় একসময়ের পতিত থাকা তিস্তার চরে আলুর বাম্পার ফলন হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এই তিন উপজেলার চরাঞ্চলে ২০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে গত বছর তিস্তার চরে আগাম আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর আলুতে লোকসান হওয়ায় চলতি বছর এই অঞ্চলে আরো বেশি জমিতে আগাম আলু চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চর ছাওলা, চর তাম্বুলপুর, শিবদেব ও রহমত চর, গঙ্গাচড়ার ইছলী চর, শংকরদহ, জয়রামওঝা এবং কাউনিয়ার গদাই ও ঢুষমারার চর ঘুরে দেখা যায়, আগাম ও স্বল্পমেয়াদি জাতের আমন ধান কর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা আগাম আলু রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে চলছে স্বল্পমেয়াদি ও আগাম জাতের আমন ধান কর্তন, অন্যদিকে চলছে গরুর হাল কিংবা পাওয়ার টিলারের সাহায্যে জমি তৈরি। কোথাও কোথাও আগাম আলু রোপণে কৃষকদের ব্যস্ত সময় কাটছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে বেশি মুনাফার আশায় নীলফামারীর কিশোগঞ্জের কৃষকরা আমন ধান কাটার পর শীতকালীন ফসল হিসেবে (রবি মৌসুম) আগাম আলুর চাষ করে থাকে। এই আলু চাষের জন্য তারা স্বল্পমেয়াদি ও আগাম জাতের (১০০ থেকে ১১০ দিন জীবনকালের) আমন ধানের চাষ করে। প্রচলিত আমন ধান কাটতে আরো মাসখানেক সময় লাগবে। অথচ কিশোরগঞ্জে আগাম ধানের কর্তন প্রায় শেষ হয়েছে। ওই জমি চাষ করে কৃষকরা আগাম আলু রোপণ করছে। মৌসুমের শুরুতে বছরের নতুন এই আলু স্থানীয় বাজার ছেড়ে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কৃষকরাও লাভবান হচ্ছে। সে কারণে গত কয়েক বছরে উত্তর জনপদের আগাম আলু উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ। অন্য এলাকায়ও কিছু কিছু জমিতে আগাম আলু চাষ হলেও কিশোরগঞ্জের জমিগুলো উঁচু ও মাঝারি উঁচু হওয়ায় এখানে যেমন আগাম ধান হয়, তেমনি ধান কাটার পর ওই জমিতে রোপণ করা হয় আগাম আলু। মৌসুমের শুরুতে আগাম এই আলু বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হয়। এ পদ্ধতিতে একই মৌসুমে একই জমিতে কৃষকরা দুইবার আলু চাষ করছে।
সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের মাগুরা, রনচ-ি ও বড়ভিটা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগাম ও স্বল্পমেয়াদি জাতের আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা আগাম আলু রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জমি তৈরি করে পরিবারের এই আগাম আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে। যেন আলু রোপণকে ঘিরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এসব এলাকা।
বড়ভিটা গ্রামের আব্দুল হাকিমের ক্ষেতে আলু রোপণ করছিল কয়েকজন শ্রমিক। সঙ্গে থাকা কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, গত বছরের আলুতে লোকসান এ বছর আলু দিয়াই পূরণ করমো বাহে। আগাম আলু বাজারে তুলতে পারলেই ৫০ থাকি ৬০ টাকা কেজি বেচা (বিক্রি করা) যাইবে।’ ওই এলাকায় দুই দিন আগেই সোলেমান আলী তিন বিঘা, রহমত আলী দুই বিঘা, শাহীন উদ্দিন তিন বিঘাসহ অনেকেই আলু রোপণ করেছে। গাড়াগ্রাম এলাকার কৃষক বুলবুল মিয়া জানান, সঠিকভাবে যতœ নিলে রোপণ থেকে ৬০ দিনের মাথায় এই আলু বাজারে বিক্রি করা যাবে।
সূত্র জানায়, গত বছর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ছয় হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ করা হয় তিন হাজার হেক্টরে। গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছে। চলতি বছর আগাম আলু সাড়ে তিন হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। রোপণকৃত আগাম আলু ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় উত্তোলন করে কৃষকরা ওই জমিতে দ্বিতীয় দফায় আলু চাষ করবে।