মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে জিহাদের অধ্যায়

নিউজ ডেস্ক:বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব অনুধাবন করে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাদ্রাসায় পড়েই শিক্ষার্থীরা এখন জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করছেন। হচ্ছেন গবেষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী। মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞানচর্চাই নয়, সুনাগরিক হিসেবেও নিজেদের দেশ-বিদেশে তুলে ধরছেন। মাদ্রাসা শিক্ষার এই উন্মেষের নেপথ্যে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। শতভাগ ডিজিটাল সেবা প্রদানে এগিয়ে আছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। দেশের সাড়ে ৯ হাজার মাদ্রাসাপ্রধানের দোরগোড়ায় সেবা প্রদান নিশ্চিত করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিসহ সেবার মান সহজীকরণে নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে দৈনিক সময়ের আলোকে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফ উল্যা।

তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতির নির্দেশনা, পরিবর্তিত জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং সমকালীন জীবনের চাহিদা বিবেচনা করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ইবতেদায়ি, জুনিয়র দাখিল, দাখিল এবং আলিম স্তরের সব শ্রেণির ইসলাম ও আরবি বিষয়সমূহের শিক্ষাক্রম পরিমার্জন/উন্নয়ন করা হচ্ছে। শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইসলামী আখলাক, আকিদা ও মূল্যবোধ চর্চা,সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হবে।

তিনি বলেন, জিহাদ,  সন্ত্রাসবাদে উৎসাহ দিতে পারে এমন কোনো পাঠ থাকবে না। মাদ্রাসা শিক্ষায় আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং জীবনমুখী শিক্ষা সংযোজন করা হবে। নতুন পাঠ্যক্রমের বই ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী মাদ্রাসার পাঠ্যবই যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে। দেশব্যাপী ১৯টি কর্মশালার মাধ্যমে কোরআন মাজিদ, আকাইদ, আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র বিষয়ের বইগুলোর পাঠ্যক্রম পরিমার্জন করা হবে। এসব কর্মশালায় ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা থাকবেন। এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষায় অভিজ্ঞ আলেম ও অভিজ্ঞ শ্রেণিশিক্ষকরা এসব কর্মশালায় অংশ নেবেন।

অধ্যাপক ছায়েফ উল্যা বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে ই-অফিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। অন্য সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ডিজিটাল সেবা প্রদানে এগিয়ে। আগে হাজার হাজার আলেম-ওলামারা সেবা পেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মাদ্রাসা বোর্ডে ভিড় জমাতেন। অধিভুক্ত মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির (গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটি/অ্যাডহক কমিটি) অনুমোদন, বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়ন এবং একাডেমিক স্বীকৃতির নবায়নে বোর্ডে কষ্ট করে আসতে হয় না। মাদ্রাসায় বসে অনলাইনে সেবা পেয়ে যাচ্ছেন। স্বল্প সময়ে শিক্ষার্থীর ট্রান্সফার, বিষয় কোড পরিবর্তন, নামের আক্ষরিক সংশোধন অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশনার আলোকে সকল ক্রয় কার্যক্রম এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে প্রথম থেকেই ই-টেন্ডারিংয়ে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির সফল ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে জেডিসি, দাখিল ও আলিম শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন (ব-এসআইএফ), পরীক্ষার ফরম পূরণ (ইএফএফ) করা হচ্ছে। পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় কার্যক্রম যথা ফল প্রক্রিয়াকরণ ও স্বল্প সময়ে প্রকাশ, ফল পুনর্নিরীক্ষণ, নম্বরপত্র, সনদপত্র প্রদান ও পরীক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় কার্যক্রম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বোর্ডের অধিভুক্ত সব মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার নিজস্ব ডোমেইন নামের ওয়েব পোর্টালের আওতায় ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েবসাইট খুলে দেওয়া হয়েছে। ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন এসএমএসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হচ্ছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষার মাদ্রাসার কেন্দ্র হতে দৈনন্দিন তথ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। ছবিসহ পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষরলিপি অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। অটোমেশন পদ্ধতিতে পেরোল সফটওয়ারের মাধ্যমে বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা (সরকারি আয়করসহ)-এর হিসাব বিবরণী তৈরি করে তা প্রদান করা হচ্ছে।