পুকুর ছাড়া মাছ চাষে বিশাল সম্ভাবনা

পুকুর ছাড়া মাছ চাষে বিশাল সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে গত বছরই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ মাছ উৎপাদিত হয়েছে দেশে। স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশে মাছ থেকে প্রোটিন বাড়ানোর জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) পুকুরে সময় সাপেক্ষ মাছ চাষের পরিবর্তে স্বল্প জায়গায় একটি ঘরের মধ্যেই আধুনিক মাছ চাষ পদ্ধতি ‘রাস’ (রিসারকুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম) নিয়ে কাজ করছে। অবশ্য এ ধরনের আরেকটি পদ্ধতি আছে যার নাম বায়োফ্লক পদ্ধতি। তবে দুই পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

সম্প্রতি বিসিএসআইআরের আইটিটিআইতে (ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফার অ্যান্ড ইনোভেশন) বিসিএসআইআরের এডপটিভ রিসার্চ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ, সদস্য মুহাম্মদ শওকত আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক সাইমুম হোসেন প্রমুখ। আইটিটিআইর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, পুকুরে ১ ঘনমিটার জায়গায় ১৫ কেজি শিং, মাগুর, পাবদা, টেংরা বা গুলশা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ মাছ চাষ করা যায়। কিন্তু রাস পদ্ধতিতে একই জায়গায় ৭০ কেজি পরিপক্ব মাছ পাওয়া যাবে। আর পোনা থেকে মাছ পরিপক্ব হতে মাছভেদে চার থেকে সাড়ে চার মাস লাগবে। তিনি আরও জানান, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তারা প্রকল্প শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য কিছু ব্যাংক উদ্যোক্তাদের বিশেষ ঋণ দিচ্ছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাবারের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমতল চাষাবাদের জায়গাও কমে আসছে। তাই এ চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের কম জায়গায় বেশি খাদ্য উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণের সময় এখনই। আমাদের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণে মৎস্য সম্পদের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। কিন্তু মৎস্য চাষের জন্য প্রয়োজন পুকুর, যা দেশে দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তাই পুকুর ছাড়া মাছ চাষের উপায় বের করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অন্যতম রাস।’ এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো অল্প জায়গায় অধিক মানসম্মত মাছ উৎপাদন। এ পদ্ধতিতে পুকুরের পরিবর্তে একাধিক বিভিন্ন আকৃতির ট্যাংক ব্যবহার করে মাছ চাষ করা হয়। এ পদ্ধতিতে একই পানি পুনরায় ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন রকম ফিল্টার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। এটি শহরে অল্প জায়গায় এমনকি বাড়ির ছাদেও স্থাপন করা সম্ভব। তবে এটি স্থাপনে প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা বেশি লাগলেও পরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী। এ পদ্ধতিতে দেশি শিং, দেশি-বিদেশি মাগুর, পাবদা, টেংরা বা গুলশা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ, চিংড়ি, ভেটকিসহ নানা প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়।