নান্দাইলে গাছে গাছে মাল্টা

নান্দাইলে গাছে গাছে মাল্টা

নিউজ ডেস্ক: ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ একটি রসালো ফল হচ্ছে মাল্টা। সবার কাছে এটি একটি অত্যন্ত মজাদার ফল। তুলনামূলকভাবে শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী এবং রোগীরা খেয়ে থাকেন এ ফলটি। এটি একটি অর্থকরী ফসল। মাল্টা চাষে এলাকার পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ঠিক তেমনি ময়মনসিংহের নান্দাইলের খারুয়া ইউনিয়নের নাগপুর গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন ভূঞা মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন। শখের বশে মাল্টা চাষ করে ৪ বছরের মাথায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। তার বাগানে এখন শত শত মাল্টা ঝুলছে।

হেলাল উদ্দিন ভূঁঞা জানান, ২০১৭ সালে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে রাজস্ব খাতের প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে সরকারিভাবে ৫৯টি মাল্টার চারা পেয়েছিলেন তিনি। নিজ বসত ঘরের সামনের পতিত ৩৩ শতাংশ সমতল জমিতে সেই চারা রোপণ করেন তিনি। বর্তমানে বাতাস উঠলেই তার বাগানে তালে তালে দোল খাচ্ছে মাল্টাগুলো। থোকায় থোকায় মাল্টাগুলো তার কাছে স্বপ্ন। এতে হেলাল ভূঞার মনে আনন্দের বন্যা বইছে। তার মাল্টা বাগান দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুুষ ছুটে আসছেন।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আগ্রহী কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্য বিতরণ করা হচ্ছে সার, বীজ ও ফলের চারাসহ বিভিন্ন উপকরণ। তারই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে হেলাল উদ্দিন ভূঁঞাকে ৫৯টি বারি জাত মাল্টার চারা দেওয়া হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় নিবিড় পরিচর্যার কারণে রোপণের ২ বছরের মাথায় গাছে মুকুল আসে ও তারপর আশানুরূপ ফলন। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে দেওয়ার পরও তিনি ৩০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। সরেজমিন হেলাল উদ্দিন ভূঁঞার মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে সবুজ রঙের মাল্টা।

মাল্টার আকারও বেশ বড়। প্রতিটি গাছে ৬০ থেকে ৭০টি করে মাল্টা ধরেছে। খেতে বেশ রসালো ও মিষ্টি। এরই মধ্যে বাগান থেকে ফল বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি। স্থানীয় পাইকাররা তার বাগানের মাল্টাগুলো কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আবার চাহিদার কারণে বাড়ি থেকেই বেশিরভাগ লোকজন কিনে নিচ্ছেন। বাগান থেকে সতেজ মাল্টা নিয়ে ক্রেতারাও বেশ খুশি। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এ বছর গাছে যে পরিমাণ মাল্টা রয়েছে তা থেকে আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়ার পরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান। মাল্টা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে তিনি আনার চাষ করেও সফল হয়েছেন।

নান্দাইল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মালেক চৌধুরী স্বপনও মাল্টার চাষ করেছেন। তিনি বলেন, তার বাগানে রাসায়নিক কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেননি। একইভাবে মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন উত্তর রসুলপুরের বদরুল হাসান মানিক, বাঁশাটি গ্রামের মো. রাশিদ, শিবনগর গ্রামের মিজানুর রহমান চন্দন এবং রসুলপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ বলেন, মাল্টা গাছ রোপণের ২ বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে চারা রোপণ করতে হয়। একটি মাল্টা গাছ অন্তত ২০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, প্রথম মৌসুমে ফলন একটু কম হয়। ৫ বছর বয়সি প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০টি মাল্টা পাওয়া যায়।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, উপজেলার ছয়টি বাগানে বারি-১ জাতের মাল্টার আবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি বাগানে আশানুরূপ ফল এসেছে। আগামীতে মাল্টার আবাদ অনেক বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।