ধানের বাম্পার ফলনেও খুশি নয় কৃষক

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা: দেশের বেশ কয়েকটি হাওর প্রধান জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ অন্যতম। প্রতিবছর কৃষকরা বন্যার ভয়কে মাথায় নিয়ে বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন। ২০১৭ সালের বন্যায় বাঁধ ভেঙে জেলার সকল ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে ধান আবাদে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে কৃষকের। এবারও প্রশাসন থেকে আগাম বন্যার সতকর্তা দেয়া হয়। অনেক ভোগান্তির পর কৃষক হাওড়ের ধান কাটা শেষ করেছে।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ধান উৎপাদন হয়েছে অনেক। কিন্তু হাওরে ধানের বিপ্লব হলেও ধান ঘরে তুলে খুশি নন জেলার অধিকাংশ কৃষক। তাদের ধান খাদ্য গুদামে দেয়ার আশ্বাসে কৃষি কার্ড নিয়ে যাওয়া হলেও ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান দিতে না পারায় কৃষকরা বাধ্য হয়েই ধানগুলো ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করছেন।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে দুই লাখ ২০ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। সেখানে ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু এ বছর সুনামগঞ্জ থেকে সরকার ২৫ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে। একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান খাদ্য গুদামে দিতে পারবেন। যা জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। ফলে কৃষকরা ব্যাপারীর কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরকার বোরো ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা ও প্রতি মণ ১০৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও দালাল-ফড়িয়ার কাছে জিম্মি হয়ে কৃষকদের তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণে। সরকার নির্ধারিত ধান ক্রয়ে কৃষকের নামে লটারি করা হলেও অভিযোগ আছে সেখানে প্রকৃত কৃষকের সংখ্যা নিয়ে। কৃষকের ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করে দেয়ার আশ্বাস দেখিয়ে দালাল ও ফড়িয়ারা তালিকাভুক্ত কৃষকের কাছ কার্ড দিয়েই খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করেন। এছাড়াও মণ প্রতি কম টাকা দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
হাওরের কৃষকরা জানান, ধান ভালো হওয়ায় তারা খুশি, তবে সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি না করে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি করে দেয়া ছাড়া তাদের কিছু করার নেই। এতে করে ধান চাষ করে লাভবান হওয়ার চাইতে ক্ষতির মুখই দেখতে হচ্ছে তাদের। সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান দিতে না পারায় এবং ধান নিয়ে গেলেও নানা কারণে ধান বাতিল হয়ে যাওয়ার এবারও ধান চাষাবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন না তারা।

দেখার হাওরের কৃষক আলী বলেন, আমি তিন একর জমিতে ধান চাষ করছিলাম। কিন্তু একটা ধানও সরকারি গুদামে দিতে পারছি না। সরকার কয় কৃষকের কাছ থাকি ধান নেয়া অইবো, কিন্তু আসলে নেয় কার কাছি বুঝি না। আমরা কি তাইলে কৃষক না?
একই হাওরের জানিগাঁও এলাকার কৃষক মনির আহমেদ বলেন, আমরা সরকারের খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারি না আবার লটারিতেও আমাদের নাম আসে না। এখন একজনের লগে মাতছি তাই কইসোইন ৬০০ টাকা মণ দিবা? এখন বউ বাচ্চা নিয়া চলতে অইলে এই দামেই ধান বিক্রি করা ছাড়া রাস্তা নাই। আমরা চাই সরকার যেনো আমাদের দিকে নজর দেয়। আমরা কাছ থকি ধান নিলে আমরা একটু লাভবান অইলাম নে।

কৃষক কাদের মিয়া বলেন, আমরার ঘরে খাওন নাই, পকেটো টাকা নাই। এখন আমরা চলতে অইলে ওই কম দামেই ধান বিক্রি করতে অইবো। সরকারের কাছে আমরার আকুল আবেদন ধান যেন কৃষকের কাছ থকি ক্রয় করা হয়। গুদামে লইয়া গেলেও সরকারের দামে দেয় না তারা আরও কম দামে কিনতে চায়, আর এক ঘর থকি আরেক ঘর দৌড়াতে দৌড়াতে জীবন নষ্ট।
এক কৃষক বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমরার কাছ থাকি কার্ড নিয়া গেছে। আল্লাহ জানেন কার্ডের কি অবস্থা। অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা কইয়া তারা কার্ড নেয়। পরে আর তারার খোঁজ খবর পাওয়া যায় না। সরকার এরারে কিচ্ছু কয় না।