জয়পুরহাটে চিচিঙা চাষে লাভবান কৃষক

জয়পুরহাটে চিচিঙা চাষে লাভবান কৃষক

নিউজ ডেস্ক: ধান চাষের অনুপযোগী এবং বন্যার পানি থেকে মুক্ত উঁচু জমিতে চিচিঙা চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বেগুন গ্রামের কৃষকরা। তাদের চিচিঙার বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে এখন হাসি।

চিচিঙা উচ্চ ফলনশীল, কম খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় চাষিরা চিচিঙার চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেক পরিবারে ফিরে এসেছে সুখ ও স্বচ্ছলতা। চলতি বছর এ গ্রামের আশপাশে প্রায় ৩৩ থেকে ৩৫ বিঘা উঁচু জমিতে চিচিঙা চাষ হয়েছে। কালাই উপজেলার বেগুন গ্রামের কৃষক জালাল মিয়া, মো. রেজাউল ইসলাম, আবদুল নূর, ইসমাইল হোসেন, ইমদাদুল হক, আবু তাহের ও মোসলেম উদ্দিনসহ অনেকেই পালোইগাড়ি মাঠে চিচিঙার চাষ করে লাভবান হয়েছেন। বেশি লাভের আশায় ধান, আলু চাষের পরিবর্তে উঁচু জমিতে অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসলের পাশাপশি অপ্রচলিত চিচিঙা চাষ করছেন।

ক্রেতাদের কাছে চাহিদা থাকায় জমি থেকে বিক্রি হওয়ার ফলে চাষিদের পরিবহন খরচ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পাইকাররা জমি থেকে চিচিঙা কিনে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। চিচিঙা চাষে কম খরচে স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় এ ফসল চাষ বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেগুন গ্রামের চিচিঙা চাষি মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে যে জমিতে ধান চাষ তেমন হয় না ও বন্যার পানিতে ডোবে না সেসব উঁচু জমিতে চিচিঙা চাষ করা হয়। এবার ৪৫ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের চিচিঙা চাষ করেছি। এ ৪৫ শতক জমিতে চিচিঙা চাষের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এরইমধ্যে সেই জমি থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা চিচিঙা বিক্রি করেছি। আগামী প্রায় ৪ সপ্তাহ ওই চিচিঙা বিক্রি হবে। বর্তমান পাইকারি বাজারে চিচিঙার দাম অনেক ভালো। আশা করছি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে। একই গ্রামের চিচিঙা চাষি ইমদাদুল হক বলেন, গত বছরে ১০ শতক নিজ জমিতে চিচিঙা চাষ করেছিলাম।

সেই জমিতে চিচিঙা চাষ করতে সেচ, সার, বীজ ও চাষ বাবদ প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সেই জমি থেকে উৎপাদিত চিচিঙা প্রায় ২২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। চলতি বছরে ২০ শতক জমিতে চিচিঙা চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে এবং বর্তমান বাজারে চিচিঙার দামও ভালো পাচ্ছি। এ চিচিঙা চাষ করে এলাকায় অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। উপজেলার বেগুন গ্রামের চিচিঙা পাইকারি ব্যবসায়ী আমিনুর ও রফিকুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার উৎপাদিত চিচিঙাগুলো গুণগত মান খুব ভালো। তাই ঢাকা-মিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা অনেক বেশি। চাষিদের জমি থেকে প্রতি মণ চিচিঙা ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনছেন বলে জানান তারা ।

চিচিঙার গুণাগুণ বিষয় নিয়ে কালাই উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের মো. তানভীর হোসেন বলেন, চিচিঙা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। চিচিংগায় শরীরের যে কোনো ধরনের ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়। এতে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ সবজিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে। তাই শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়। চিচিঙা দেহের পানিশূন্যতা রোধ করতে পারে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। জ্বরের সময় চিচিংগা খেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে। চিচিঙা ডায়াবেটিস ও জন্ডিসের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। এ সবজিতে ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। তাই চিচিঙা একটি ভালো সবজি।

কালাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান বলেন, এ বছর চিচিঙার চাষ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। চিচিঙা চাষ ছাড়াও বিভিন্ন জাতের শাকসবজি চাষ হয়েছে। এ চিচিঙা চাষের জন্য কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহের পরামর্শ ও বালাইনাশক ব্যবহার না করার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমান বাজারে চিচিঙার চাহিদা ও মূল্য ভালো থাকায় দিন দিন চিচিংগা সবজি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।