চট্টগ্রামে ট্যানারি নেই: এবারও ঢাকার দিকে ‘তাকিয়ে’ চামড়া ব্যবসায়ীরা

Image result for ট্যানারি

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: একটা সময় চট্টগ্রামে ট্যানারি ছিল ২২টি। এর সবকটি এখন বন্ধ। সর্বশেষ পর্যন্ত চালু থাকা মদীনা ট্যানারি ও রিফ লেদারে তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) না থাকার অভিযোগে গত বছর বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর থেকে এই অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীদের একমাত্র ঠিকানা ঢাকার ১৫৪টি ট্যানারি। অথচ আগে ৭০ শতাংশ চামড়াই কিনে নিতো চট্টগ্রামের দুটি ট্যানারি। ট্যানারি না থাকায় ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কিনতে চান বলে অভিযোগ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের। এদিকে এ বছর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম কাঁচামাল লবণের দাম বাড়লেও চামড়ার দাম কমে গেছে। ফলে এই ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত চট্টগ্রামের ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ টাকায় কিনবেন ট্যানারি ব্যবসায়ীরা। ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০ টাকা।

এছাড়া সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকা দরে সংগ্রহ করবেন তারা। অথচ গত বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কিনেছিলেন। লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা। বকরির চামড়ার দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। অন্যদিকে ৭৪ কেজি ওজনের এক বস্তা লবণের দাম গত বছর ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এবার সেটি দাঁড়িয়েছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। লবণের দাম প্রায় তিনগুণ বাড়লেও চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা মুসলিম উদ্দিন বলেন, এবারের কোরবানিতে প্রায় চার লাখ গরুর, দেড় লাখ ছাগলের এবং ১২ হাজার মতো মহিষের চামড়া সংগ্রহ হবে বলে আমরা আশা করছি। কিন্তু এর সবটাই বিক্রি করতে আমাদের ঢাকার ট্যানারি মালিকদের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। কারণ ঢাকায় ১৫৪টি ট্যানারি থাকলেও চট্টগ্রামে কোনো ট্যানারি নেই। সর্বশেষ যে দুটি ট্যানারি ছিল তা আমাদের চামড়ার ৭০ শতাংশই কিনে নিত। এখন ট্যানারি না থাকায় ঢাকার ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো দামে আমাদের চামড়া বিক্রি করতে হবে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের দাবি অন্তত কোরবানের সময় যেনো চট্টগ্রামের দুটি ট্যানারি খুলে দেয়। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এখনও গত বছর চামড়ার প্রায় ২৫ শতাংশ দাম আমরা বিভিন্ন ট্যানারি থেকে বুঝে পাইনি। এর উপর এবার দাম আরও কমে গেছে, কিন্তু খরচ বেড়ে গেছে। ফলে এ পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত চট্টগ্রামের ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের এখানে ট্যানারি না থাকায় ঢাকার ট্যানারি মালিকরা নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দাম দিতে চায়। একশ চামড়ার মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ টাকা কম দেওয়া এবং প্রতি চামড়ায় নষ্টের অজুহাতে এক-দুই ফুট কমিয়ে হিসেব করে তারা। ট্যানারি না থাকায় আমাদের বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদামতো দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়। না হয় ঢাকায় গিয়ে চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে যাতায়াত খরচসহ আরও নানা আনুসঙ্গিক খরচ পড়ে যাবে। এতে চামড়া কেনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের পেছনে যে দাম চলে যায় তাতে লাভ করাতো দূরের কথা কখনো কখনো খরচও তুলতে পারি না। তাই চট্টগ্রামে ট্যানারিগুলো চালু করে দেওয়া খুব জরুরী।