ক্ষতিকর তামাক ছেড়ে সবজি চাষে ৩০০ কৃষক

ক্ষতিকর তামাক ছেড়ে সবজি চাষে ৩০০ কৃষক

পার্বত্য সংবাদদাতা: প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর উৎস-স্থল খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলা। এই উপজেলার তিন শতাধিক কৃষক পেশা পরিবর্তন করেছেন। তারা তামাক চাষ বাদ দিয়ে এখন উৎপাদন করছেন শাক-সবজি। এতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।

মানিকছড়ি উপজেলার গোরখানা এলাকার চাষি গিয়াস উদ্দিন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি নিজের ১২ কানি জমিতে তামাক চাষ করতেন। তিনি এখন তামাক চাষের নেতিবাচক পরিণতি বুঝতে পেরে ফিরে আসেন মূলধারার সবজি চাষে।

জানা যায়, ২০১৬ সালে হালদা নদীতে প্রথমবারের মতো মাছ ডিম ছাড়েনি। এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা নদী রিসার্চ ল্যাবরেটরি। জানা গেল, হালদার উজান অঞ্চল মানিকছড়ি এলাকায় আট বছর আগে সীমিত আকারে শুরু হয় তামাক চাষ। কয়েকটি তামাক কোম্পানির কুটকৌশল ও লোভণীয় প্রণোদনায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন প্রজনন মৌসুমে হালদায় মাছের ডিম ছাড়ার জন্য প্রয়োজন পাহাড়ি ঘোলা পানির ঢল। এই পাহাড়ি ঢল না আসলে প্রজনন ক্ষেত্রে মা মাছ ডিম ছাড়ে না। স্বাভাবিকভাবে এই পাহাড়ি ঢলের পানি তামাকের বিষাক্ততা নিয়ে আসলে মা মাছ ডিম ছাড়বে না। ২০১৬ সালে তাই ঘটেছিল।’ পরে চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি একটি বেইজলাইন স্টাডি করে তামাক চাষিদের মূলধারার কৃষি কাজে ফেরাতে কিছু সুপারিশ করে। ২০১৮ সাল থেকে শুরু হয় তামাক চাষিদের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানা কর্মসূচি। ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত দেড় শতাধিকসহ প্রায় ৩০০ তামাক চাষি মূলধারার কৃষিকাজে পেশা শুরু করেছেন। পশুপালন, পাহাড়ি মুরগী, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, হালদার মৎস্য চাষ, কুচিয়া চাষ এবং ফসল হিসেবে রামবুটান, বারো মাসি আম, তাইওয়ানের কাঁঠাল, বাতাবি লেবু, কমলা, মাল্টা, পেঁপে, ড্রাগন ফল, চীনা বাদাম ও আলু বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।

চবি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে সরকার। তামাকসহ নানাভাবে এটির স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করা হয়েছিল। চবি ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, হালদা নদীর উৎসস্থল মানিকছড়িতে তামাক চাষের পাতা ও অবশিষ্ট গুড়া নানাভাবে হালদা নদীতে পড়ে। ফলে একবছর মা মাছে অস্বাভাবিক কম ডিম দেয়।