এক বিঘা জমিতে ৮০ মণ মিষ্টি আলু

গাইবান্ধা সংবাদদাতা: গাইবান্ধায় এবার মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে ব্যাপক খুশি কৃষকরা। ধানের চেয়ে তিনগুণ বেশি ফলন পাওয়ায় মিষ্টি আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন তারা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিষ্টি আলু চাষে উৎপাদন খরচ ধানের তুলনায় অনেক কম। সেই সঙ্গে ধানের চেয়ে তিনগুণ বেশি ফলন হয় মিষ্টি আলুর। এজন্য মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী কৃষকরা।

দেখা গেছে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখাল বুরুজ ইউনিয়ন ও হরিরামপুর ইউনিয়নের বিষপুকুর, তালুক সোনাইডাঙ্গা, পার সোনাইডাঙ্গা, ত্রিমোহনী সেতু ঘাট এলাকার বাঙালি ও কাটাখালির নদীবেষ্টিত কয়েকটি চরে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন মাঠ থেকে আলু তুলছেন কৃষকরা। মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় তারা খুশি।

অনেকেই গরুর গাড়িতে করে জমি থেকে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন মিষ্টি আলু। আলু উত্তোলন করা কৃষকদের মাঝে দেশের লকডাউন পরিস্থিতির প্রভাব নেই। যে যার মতো কাজ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার চেয়ে তিনগুণ বেশি মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল রশিদ বলেন, এক বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। ৭৫-৮০ মণ মিষ্টি আলু উৎপাদন হয়েছে। ধানের চেয়ে তিনগুণ বেশি ফলন হয়েছে।

একই এলাকার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, গত বছর কাটাখালির নদীবেষ্টিত চরে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। অনেক কষ্টের পরও ফলন ভালো পাইনি। এ বছর মিষ্টি আলুর চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের চেয়ে তিনগুণ বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক মাজেদ মিয়া বলেন, বালু মাটিতে মিষ্টি আলুর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছি আমি। কারণ এই আলু জমি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। ধানের চেয়ে লাভ বেশি।

রামনগর গ্রামের কৃষক মনতাজ আলী ও লাল মিয়া জানান, প্রতিমণ আলু জমি থেকে ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়। শতকে উৎপাদন হয় তিন থেকে চার মণ। প্রতি বিঘায় উৎপাদিত আলুতে লাভ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। মিষ্টি আলুর উৎপাদন খরচ অনেক কম। এজন্য লাভ বেশি।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালেদুর রহমান বলেন, উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামীতে কৃষকদের মিষ্টি আলু চাষে মনোযোগী করতে মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করবেন। এ বছর ৪৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু উৎপাদন হয় ২৪ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয় ৬.৫ বা ৬.৬ মেট্রিক টন। মিষ্টি আলুতে উৎপাদন খরচ অনেক কম। পোকা-মাকড়ের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তাই পরিত্যক্ত জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করলে ধানের চেয়ে তিনগুণ লাভ হয়।

জেলা কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, বাঙালি ও কাটাখালি নদীবেষ্টিত বিভিন্ন চর ও গাইবান্ধার সাত উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে।