মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে সমুদ্র আইন অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: নৌদস্যুতার জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ অনুমোদনের কথা জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন হলে তা ব্যাপকভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ নৌসীমা ও রাষ্ট্রীয় নৌসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল, এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের উপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া, নৌদস্যুতা, সমুদ্রে সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ ও নৌচলাচল নিরাপত্তা বিঘœকারী বেআইনি কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

‘পাশাপাশি সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মেরিটাইম সহযোগিতা থেকে সুফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এ আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

খসড়া আইনানুযায়ী দস্যুতার ক্ষেত্রে কী শাস্তি- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ার বলেন, নৌদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্র সন্ত্রাস করতে গিয়ে কেউ খুন করলে মৃত্যুদ- হবে। নরমাল কোন ব্যক্তি নৌদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাস করলে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত হবেন। আর যেগুলো দস্যুতা করে নেবে তা জব্ধ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, কোন ব্যক্তি নৌদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের চেষ্টা বা সহায়তা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদ- ও অর্থদ-ে দ-িত হবেন। আর যদি (দস্যুতায়) সহযোগী হয় সহায়তা দেয় সেক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদ- ও অর্থ দ-ে দ-িত হবেন। ভিন্ন দেশের লোকও যদি আমাদের নৌসীমায় এসে এসব অপরাধ করে তিনিও একই শাস্তি পাবেন।

বাংলাদেশের নৌসীমা দিয়ে চলাচলের সময় বিদেশি জাহাজে কোন অপরাধ সংঘঠিত হলে অপরাধী গ্রেফতার ও তদন্ত পরিচালনায় হবে এই আইনানুযায়ী বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (আনক্লোজ-১৯৮২)’ শীর্ষক কনভেনশন জাতিসংঘ গ্রহণ করলে একই বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠিত সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর নতুন যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘আনক্লোজ-১৯৮২’, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত দুটি মামলা রায় (মিয়ানমান ও ভারত) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেরিটাইম অঞ্চল ঘোষণা ও সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, নৌদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস, নৌচলাচলের নিরাপত্তা বিরোধী অবৈধ কর্মকা- দমন ও শাস্তি প্রদান, সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত, দূষণজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই অর্থনীতি উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুনীল অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয় সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর একটি প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত করে। পরে সেই খসড়াটি নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হয় বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।