বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নের চাকা থমকে যেতে পারে : আইএমএফ’র পূর্বাভাস

ডেস্ক: ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটিশ অর্থনীতি স্বল্পমেয়াদি সংকটে পড়তে পারে। এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নের চাকাও থমকে যেতে পারে। এমন সতর্কতা বার্তা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। সংস্থাটির দেয়া ব্রিটিশ ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সাম্প্রতিক পূর্বাভাসেও এর প্রভাব পড়েছে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে উভয় অর্থনীতিতেই প্রত্যাশার চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আইএমএফ জানিয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি ধারণা করছে, চলতি বছর ব্রিটিশ অর্থনীতি ১ দশমিক ৭ শতাংশ সম্প্রসারিত হতে পারে। আগের অনুমিত হিসাবের চেয়ে এ হার দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। এছাড়া আইএমএফ ২০১৭ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১

দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এপ্রিলের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে প্রকাশিত পূর্বাভাসের চেয়ে এ হার  দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। অবশ্য পূর্বাভাস কমালেও সংস্থাটি বলছে, চলতি বছর প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে ব্রিটেন জি৭ দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। এ তালিকায় প্রথম স্থানটি থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে।

সাম্প্রতিক গণভোটের আগে থেকেই ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে আইএমএফ। এখনো বৈশ্বিক সংস্থাটির কণ্ঠে অনেকটা একই সুর। অবশ্য তহবিলটি ব্রিটেনে বড় ধরনের মন্দার আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছে। তবে তারা বলছে, শ্লথ প্রবৃদ্ধির এ সময়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে’কে কর সংকোচন ও ব্যাপক বাজেট ঘাটতির মতো সমস্যার মোকাবেলা করতে হতে পারে।

ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাকি দেশগুলোয় তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ব্রিটেন ও ইইউর মধ্যকার স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য থেকে যেন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুফল অর্জন করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

শুধু ব্রিটেন বা ইইউ নয়, বরং ব্রেক্সিটের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। এ কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির ধারণা, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে যথাক্রমে ৩ দশমিক ১ ও ৩ দশমিক ৪ শতাংশে। এপ্রিলের পূর্বাভাসের চেয়ে উভয় হারই দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।

ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের বাইরে ব্রেক্সিটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে

জার্মান ও ফরাসি অর্থনীতিতে। প্রবৃদ্ধির দিক থেকেও দেশ দুটি ব্রিটেনকে অনুসরণ করতে পারে বলে আইএমএফ জানিয়েছে। সংস্থাটির ধারণা, আগামী বছর জার্মানির অর্থনীতিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে, আগের হিসাবের চেয়ে যা দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।

আইএমএফের ইকোনমিক কাউন্সিলর মাউরি অবস্টফেল্ড বলেছেন, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখা গেছে। ইউরোজোন ও জাপানে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের মূল্যেও আংশিক উত্তরণ দেখা যায়, যা বেশ কয়েকটি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য সহায়ক হয়েছে। তিনি আরো জানান, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ব্রেক্সিট ভোটের আগে ২০১৬-১৭ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল আইএমএফ। কিন্তু ব্রেক্সিট সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।