‘ওর মতো ছেলেদেরকে কারা এ পথে নিয়ে যাচ্ছে?’ প্রশ্ন আবিরের বাবার

ঢাকা: ‘ওর মতো ছেলেদেরকে কারা এ পথে নিয়ে যাচ্ছে?’ এ প্রশ্ন করছিলেন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের কাছে জঙ্গি আক্রমণের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারী আবির রহমানের বাবা সিরাজুল ইসলাম।

বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আহ্বান জানান যেন এটা বের করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়।

সিরাজুল ইসলাম বলছিলেন, তিনি প্রার্থনা করেন বাংলাদেশের আর কোনো বাবা-মা যেন এরকম পরিস্থিতিতে না পড়ে।

‘কিভাবে কারা এই ধরণের ছেলেদের মডিফাই করে কি করছে, এ জন্য যেন পদক্ষেপ নেয়া হয়,’  বলেন তিনি।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে ছেলে তাকে নিয়ে নামাজ পড়তে যেতো, বাসায় থাকলে বাবাকে না নিয়ে খেতে বসতো না – তার যে এমনটা হবে তা তিনি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি।

ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলছিলেন, তার অন্য দুই ছেলের খেলাধুলায় আগ্রহ ছিল না, কিন্তু আবির ক্রিকেট খেলতো। ভাইদের সাথে এটাই ছিল তফাৎ।

আবিরের ভাই আশিকুর রহমান বলছিলেন, আবির ধার্মিক ছিল, নিয়মিত নামাজ পড়তো, দাড়ি রেখেছিল। কিন্তু এটা অস্বাভাবিক কিছু বলে তাদের মনে হয়নি।

কিন্তু কেন চার মাস আগে আবির বাড়ি ছেড়ে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় – তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না পরিবারের কেউই। তারা এ নিয়ে পুলিশের কাছেও যাননি।

তবে গুলশানের ঘটনার পর যখন সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয় যে – সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তরুণ ছেলেদের একটি দলই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে এবং এরকম আরো অনেক পরিবারের ছেলেই নিখোঁজ আছে – তখনই আবিরের পরিবার পুলিশের কাছে ব্যাপারটা জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

থানায় জিডি করার কয়েকদিনের মধ্যেই শোলাকিয়ার আক্রমণে ঘটনায় আবিরের নিহত হবার খবর পান তারা।

এ-লেভেলের পরই অস্ট্রেলিয়া যাবার ইচ্ছে ছিল আবিরের। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় মনক্ষুণ্ণ হয়েছিল সে – জানিয়েছেন তার বাবা ও ভাই ।

‘তাকে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি করা হয়। আবিরের কথা ছিল, এই কোর্স শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় নয়, বরং মালয়েশিয়া যাবে। সেই আশাতেই আমরা ছিলাম,’ বলছিলেন আবিরের বাবা সিরাজুল ইসলাম।

কিন্তু চার মাস আগে হঠাৎ করে নিখোজ হয়ে যায় আবির। তার ঘরের বারান্দায় ফুলের গাছ ছিল, খাঁচায় পোষা পাখী ছিল।

যাবার আগে সে পাখিগুলো ছেড়ে দিয়ে গেছে, বলছিলেন আবিরের ভাই, আশিকুর রহমান।

আবিরের ভাই আশিকুর রহমান বলছেন, অনলাইনে আবির কি করছে সে সম্পর্কে তারা জানতেন না এবং এখন তারা বুঝতে পারছেন যে তাদের আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল।

‘ফেসবুকে আবির কি করছে, কাদের সাথে মিশছে – সে সম্পর্কেও আমরা কিছু জানতাম না।’