বাজারের সাদা চিনি ডায়বেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়

নিউজ নাইন, স্বাস্থ্য ডেস্ক: বাজার থেকে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত চিনি না কিনে ভাল চিনি কেনার অভ্যাস সহজেই গড়ে তোলা যায়। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে ঝকঝকে সাদা চিনি। ঝরঝরে মিহি দানার এই চিনি আকর্ষণীয় প্যাকেটে বাজারজাত করার কারণে ক্রেতাদের বেশি টানে।

অন্যদিকে দেশে তৈরি আখের চিনি স্বাস্থ্যকর হলেও এটি দেখতে লালচে, এর আর্দ্রতা বেশি। অনেক সময় ক্রেতারা এই চিনি কিনতে আগ্রহ দেখান না। কিন্তু দেশীয় চিনিকলে উৎপাদিত চিনি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং শিশু খাদ্য হিসেবে উপযোগী। শিল্প-কারখানা রিফাইনিং (পরিশোধিত) পদ্ধতিতে চিনি তৈরির সময় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারি পুষ্টি উপাদান দূর হয়ে যায়। এই চিনি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিদেশ থেকে আমদানীকৃত চিনি তৈরিতে সবসময় আখ ব্যবহার করা হয় না। আখের বিকল্প উপাদান দিয়েও চিনি তৈরি হয়। এই চিনিতে মিষ্টতা আনতে বাড়তি রাসায়নিক মিশ্রিত করা হয়। আর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় চিনিতে যুক্ত হয় আরও ক্ষতিকর নানা উপাদান। পরিষ্কার বা সাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সালফার, হাড়ের গুঁড়ো।

সাদা চিনি বা রিফাইন করা চিনি যে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, সে সম্পর্কে ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন এক গবেষণাপত্র বের করেছিলেন অনেক আগেই। সেখানে ড. মার্টিন সাদা রিফাইন চিনিকে বর্ণনা করেন বিষের সাথে।

ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষনাপত্রে বলেন-
চিনি রিফাইন করে সাদা করার জন্য চিনির সাথে যুক্ত প্রাকৃতিক ভিটামিন ও মিনারেল সরিয়ে শুধু কার্বোহাইড্রেট রাখা হয়। কিন্তু শুধু কার্বোহাইড্রেট শরীর গ্রহণ করতে পারে না। মিনারেল ও ভিটামিনবিহীন কার্বোহাইড্রেট দেহের মধ্যে টক্সিক মেটাবোলাইট সৃষ্টি করে। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলে কোষ অক্সিজেন পায় না এবং অনেক কোষ মারা যায়।
ড. উইলিয়াম কোডা মার্টিন গবেষণা লব্ধ ফলাফল দিয়ে প্রমাণ করে- রিফাইন করা চিনি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, হার্ট ও কিডনী ধিরে ধিরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ব্রেনের উপর মারাত্মক ক্ষতিকারণ প্রভাব সৃষ্টি করে। সূত্র: গ্লোবাল হিলিং সেন্টার

উল্লেখ্য, দেশীয় চিনিতে গুড় মিশ্রিত থাকায় তা লাল বর্ণ ধারণ করে। অপরদিকে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত চিনি তৈরিতে সবসময় আখ ব্যবহার করা হয় না। আখের বিকল্প উপাদান দিয়েও চিনি তৈরি হয়। এই চিনিতে মিষ্টতা আনতে বাড়তি রাসায়নিক মিশ্রিত করা হয়। আর পরিশোধন প্রক্রিয়ায় চিনিতে যুক্ত হয় আরও ক্ষতিকর নানা উপাদান। আবার পরিষ্কার বা সাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সালফার ও হাড়ের গুঁড়ো। বলাবাহুল্য এই হাড়ের গুড়ো আবার অনেক সময় মুসলমানদের হালালও হয় না।

আরো উল্লেখ্য বিজ্ঞানীরা মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ কারণ চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই রিফাইন করা চিনি। তাদের মতে বাজার থেকে কেনা এনার্জি এবং ফ্রুট ড্রিংকস-এ থাকে প্রচুর পরিমাণে এই চিনি । সোডা আর এই চিনি ক্যান্সার জীবাণু বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এছাড়া এই চিনি শরীর মোটা করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নষ্ট করে শরীরের শর্করা ও পুষ্টিগুণ।

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানি করা মিহি দানার সাদা চিনির ক্ষতিকর  উপাদান নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশীয় আখের চিনির পরিবর্তে আমদানি করা চিনিতে জনস্বাস্থ্যের  জন্য  ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে অনেক বেশি মাত্রায়। তাই  আমদানি করা এই চিনিকে বিষের সাথে তুলনা করে তা  নাখাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকগণ।

ছবি: বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীনস্থ চিনি কলের উৎপাদিত ‘আখের চিনি’
ছবি: বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীনস্থ চিনি কলের উৎপাদিত ‘আখের চিনি’

সংশ্লিষ্ট  সূত্র জানায়, আমদানিকৃত অপরিশোধিত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিধায় এনিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যে  তোলপার শুরু হয়েছে। এই চিনির বিকল্প তালাশ করছে পশ্চিমাবিশ্বের উন্নত দেশগুলো। যেসব দেশে আখের চিনি উৎপাদনের ব্যবস্থা নেই সে সব দেশে বিকল্প হিসেবে বেচে নিয়েছে স্টিভিয়া।  বাংলাদেশে আখের চিনি (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীনস্থ চিনি কলের উৎপাদিত চিনি) থাকলেও  ভোক্তা সাধারণ আমদানিকৃত চিনির প্রতি বেশি আগ্রহী। দেখতে সাদা ঝকঝকে মিহিদানার এই চিনির ক্ষতিকর বিষয়ে ভোক্তা সাধারণ জ্ঞাত নন।

পুষ্টিবিদদের মতে আমদানিকৃত  চিনি যা পরিশোধিত করে বিক্রি করা হচ্ছে সেই চিনিতে মিষ্টির কোন মৌলিক উপাদান নেই। কৃত্রিম উপায়ে মিষ্টি করা হয়। আর এই চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বিস্তর। এই চিনিতে নেই মেটাবোলাইজিং, গ্লুকোজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-বি, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি উপাদান যা আখের চিনিতে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই চিনি ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়ায়। আর মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের যে ১০ কারণ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা চিহ্নত করেছেন তার একটি হচ্ছে এই চিনি। তাদের মতে বাজার থেকে কেনা এনার্জি এবং ফ্রুট ড্রিংকস-এ থাকে প্রচুর পরিমাণে এই চিনি । সোডা আর এই চিনি ক্যান্সার জীবাণু বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এছাড়া এই চিনি শরীর মোটা করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নষ্ট করে শরীরের শর্করা ও পুষ্টিগুণ। অনেকে  আখের চিনির বিকল্প হিসেবে আর্টিফিসিয়াল সুইটেনার্স বা কৃত্রিম চিনি খান। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই চিনি তৈরিতে ব্যবহার  হয় সোডা ও কপি সুইটেনার্স।