উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিরোধিতা সন্তু লারমার

উপজাতি পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেতা সন্তু লারমা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিরোধিতা করে বলেছে, বিশেষত ন্যাশনাল পার্ক, ইকো পার্ক, রিজার্ভ ফরেস্ট, সামাজিক বনায়ন, সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প ও স্থাপনা সম্প্রসারণ ইত্যাদির কারণে উপজাতিরা ভূমি হারাচ্ছে। ইকোনমিক জোন গড়ার পরিকল্পনায় উপজাতিরা ভূমি হারাতে শুরু করেছে।”
সরকার এসব প্রকল্পের মাধ্যমে উপজাতিদের প্রতি ‘বৈরী ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে’ বলে অভিযোগ করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘বাংলাদেশ উপজাতি ফোরামের’ চেয়ারম্যান উপজাতি পাহাড়ি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। জাতিসংঘ উপজাতি বিষয়ক ঘোষণাপত্রের এক দশক ও উপজাতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে শনিবার সকালে রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে নানা সরকারের বিপক্ষে বিভিন্ন রকম উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয় সন্তু লারমা নামে পরিচিত উপজাতিদের এই নেতা।
উপজাতিদের উপর বৈরী আচরণের মাত্রা ‘অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে’ এমন মন্তব্য করেছে সে। রাষ্ট্র ও সরকার উপজাতিদের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। উপজাতি ফোরামের আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেছে, উপজাতিদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দেয়ায় দেশের ৩০ লাখ উপজাতি জনগণ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে ‘বঞ্চিত’ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে উপজাতি দিবসের বক্তব্যে উপজাতি অধিকার ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বেশকটি ধারা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেগুলো অনেকটা ‘ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়া হয়েছে’।
সে পার্বত্য চট্টগ্রামের জ্ম্মু উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদগুলোর নির্বাচন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ, সেনা শাসন- অপারেশন উত্তরণসহ সব অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, অস্থানীয়দের কাছে ভূমি ইজারা বাতিলকরণ, পার্বত্য অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে পার্বত্যদের অগ্রাধিকার ইত্যাদি দাবি করেছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে উপজাতি দিবস উদযাপনের ঘোষণায় জানানো হয়, আগামী ৯ অগাস্ট সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে উপজাতি ফোরামের মূল অনুষ্ঠান।
এতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি জাফর ইকবাল উৎসব উদ্বোধন করবে বলে কথা রয়েছে। সেদিন দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতেও উপজাতি দিবস উদযাপিত হবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জাতিসংঘ উপজাতি অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রের এক দশক’। দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ অগাস্টকে উপজাতি দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করাসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানায় সন্তু লারমা।
জাতিসংঘ ঘোষিত উপজাতি অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অবিলম্বে বাস্তবায়ন, এসডিজি ও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ে উপজাতিদের পূর্ণ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা, উপজাতিদের জীবন, উন্নয়ন ও ভবিষ্যতকে প্রভাবান্বিত করে এমন প্রকল্প বা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের আগে উপজাতিদের সাথে অর্থপূর্ণ সংলাপ, ‘ফ্রি, প্রায়োর অ্যান্ড ইনফরমড পলিসি’ অনুসরণ, উপজাতিদের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভীমি অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান ও সংবিধান সংশোধন করে উপজাতিদের আত্ম পরিচয় ও অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া, মধুপুরে গারো, বর্মণ ও কোচদের ভূমিতে ঘোষিত রিজার্ভ ফরেস্ট বাতিল করা এবং মৌলভীবাজারের ঝিমাই ও নাহার খাসিয়া পুঞ্জিতে চা বাগানের লিজ বাতিল করা রয়েছে।