প্রতিশ্রুত সময়ে বোনাস পাননি অনেক পোশাক শ্রমিক
ঢাকা: সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধের শেষ দিন ছিল গতকাল রোববার (২৭ জুন)। তবে শেষ দিনেও বোনাস পরিশোধ করেনি অনেক কারখানা। কিছু কারখানায় আবার মে মাসের বেতনও হয়নি। সব মিলিয়ে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি কারখানায়।
প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে বোনাস দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রামের কারখানাগুলো। বন্দরনগরীতে তৈরি পোশাক কারখানা আছে ৬৫৭টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত বোনাস দিয়েছে ৮৫টি বা ১৩ শতাংশ কারখানা। অর্থাত্ ৮৭ শতাংশ কারখানাই ঘোষিত সময়ে বোনাস দেয়নি শ্রমিকদের।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর একটি তৈরি পোশাক কারখানা গাউস গার্মেন্টস। কারখানাটির শ্রমিকরা এখনো মে মাসের বেতনই পাননি। এ অবস্থায় বোনাসের আশা এক রকম ছেড়ে দিয়েছেন তারা। শিল্প পুলিশের নজরদারিতে থাকা কারখানাটি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বলেন, চট্টগ্রামে ৬৫৭টি পোশাক কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৮৫টি শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ করেছে।
না’গঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে, এমন কারখানার সংখ্যা ১৩১। পোশাক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে অঞ্চলগুলোয় মোট কারখানা আছে ২ হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ কারখানায় বোনাস দেয়া হয়েছে বলে জানায় ওই এলাকার শিল্প পুলিশ। অনেক কারখানা আছে, যেগুলোর মে মাসের বেতন পরিশোধ নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে। এমনই একটি কারখানা বেনেটেক্স।
না’গঞ্জের শিল্প পুলিশের পরিচালক ছানা শামীনুর রহমান বলেন, না’গঞ্জ শিল্প পুলিশের আওতায় যেসব কারখানা আছে তার মধ্যে ২০ শতাংশের বোনাস দেয়া হয়েছে।
আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই এলাকায় কারখানা আছে মোট ১ হাজার ৩০টি। বড় কোনো সমস্যা না হলেও কিছু কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিল্প পুলিশ। গতকাল রোববার আশুলিয়ায় নাজ নিট ও ওলি নিটের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। শিল্প পুলিশ বলছে, এ অঞ্চলের অর্ধেকের কিছু বেশি কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে কারখানা রয়েছে মোট ১ হাজার ৩৯২টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানার সংখ্যা ৮০০। এ অঞ্চলের শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে, ৭০ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ কারখানায় বোনাস দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বেশির ভাগ কারখানা কর্তৃপক্ষই শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বোনাস পরিশোধ করছে। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না, এমনটাই প্রত্যাশা শিল্প পুলিশের।
শ্রমিক প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ হয়নি। শ্রমিক সংগঠনগুলোও আবার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। একটি সংগঠনের দাবি, ২৫ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়েছে। আরেকটি সংগঠন বলছে, বোনাস পরিশোধে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য শ্রমিকরা দেননি। তৃতীয় সংগঠনটি বলছে, ৫০-৬০ শতাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে। আর তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, ৭০ শতাংশ কারখানা ঘোষিত সময়ে বোনাস পরিশোধ করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, আমাদের দাবি ছিল ২০ রমজানের মধ্যে বোনাস পরিশোধের। আবার আইনে বোনাসের বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ না থাকায় অনেক মালিক এর সুযোগ নিয়ে গড়িমসি করছেন।
২৫ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ক্ষুদ্র-মাঝারি অনেক কারখানায় বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে।
৫০-৬০ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়েছে বলে জানান সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। খবর: বণিক বার্তা