সিলেটের ইসকন মন্দির থেকে গুলির ভিডিও ফাঁস, অনলাইনে তোলপাড়
বাজি রাও: গত ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সিলেটে মন্দিরের উচ্চশব্দে ঢোল-বাজনায় জুম্মার নামাযে ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে বিক্ষুদ্ধ জনতা ইসকন মন্দিরে ইট-পাটকেল মারলে মন্দিরের ইসকনভক্তদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মন্দিরে হামলার খবরটাই হাইলাইট করে প্রচার হয়। তবে বিপরীত পক্ষ থেকে অর্থাৎ ইসকন মন্দির থেকে যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল, সেটা কোন গণমাধ্যমে প্রকাশ না হওয়ায় প্রকৃত সত্য চাপা পড়ে গিয়েছিলো। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশ না হলেও সত্য চাপা থাকেনি অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। Sushanta Das Gupta নামক ফেসবুক আইডি থেকে সেই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এখানে ফেসবুকে প্রকাশ হওয়া বিক্ষুদ্ধ মুসলমানদের ঢিল ছোড়ার সময় ইসকন মন্দির থেকে গুলি করার ভিডিওটি দেয়া হলো-
ঘটনার পরের দিন শনিবার হিন্দু ধর্মের ইসকনভক্তরা প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করে সরকারকেও নানা হুমকি ধমকি দিয়েছে এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে চাপসৃষ্টি করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তাদের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে। ইসকনভক্তদের মন্দিরে ঢিল মারায় ২০০০ মুসলমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ইসকন নেতা শ্রীপাদ নবদ্বীপ গৌরাঙ্গ । তবে মন্দিরের ভেতর থেকে মুসলমানদের উপর গুলি করার অপরাধে কোন ইসকনভক্তের নামে মামলা করা হয়নি।
হামলা-সংঘর্ষের নেপথ্যের ঘটনা গণমাধ্যম আড়াল করে গেলেও সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে এঘটনার এপিঠ-ওপিঠ উন্মোচিত হয়েছে।
ফেসবুকে এ নিয়ে সরব হয়েছেন Arnab Bhattacharjee নামক সিলেটের এক স্থানীয় হিন্দু। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- “ইস্কনী মতাদর্শীরা ধর্ম পালন করতে গিয়ে মন্দিরে পিস্তল,, বন্দুক,, ইত্যাদি অস্ত্রাদি রাখার অনুমতি কি প্রশাসনিক ভাবে নাকি গুহ্য।।ধর্ম পালনে অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা কি সেটাই জানার অভিপ্রায়।।”
এই স্ট্যাটাসটি দেয়ার পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো কমেন্ট করে। সেগুলোতেই ফুটে উঠে যে, সেদিন ইসকনীরা কিভাবে বন্দুক দিয়ে গোলাগুলি করেছিল। যেমন একটি কমেন্টে অর্ণব ভট্টাচার্য জোরের সাথেই লিখেছে যে-
//সত্য সর্ব্বদায়ই স্বীকার্য।।
ভয় নয় বরং সাহসিকতার সহিত সত্য কথা বলেছি।।।
কেউ বলতে পারবেন যে ইসকনী রা গুলি করে নাই,,,//
ইসকনভক্তরা তার এই অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করে। Dipu Bhattacharjee Sourav নামক এক ইসকনী দাবি করে, পুলিশ নাকি মন্দিরের ভেতর থেকে গুলি করেছিল। কিন্তু তার জবাবে অর্ণব ভট্টাচার্য লিখে-
//যখন গুলি করা হয় তখন কোন পুলিশ মন্দিরের ভেতর ছিলই না।।আর গেরুয়া পুশাকের পুলিশ বাংলাদেশে আছে আজ প্রথম শুনলাম//
অর্ণব ভট্টাচার্যকে হিন্দুরা ভিডিওর দোহাই দিয়ে দাবি করে, হিন্দুরা নাকি কোন গুলি করেনি। উত্তরে সে বলল-
//ভিডিও কেন আমার নিজ চোখে দেখেছি//
অর্থাৎ অর্ণব ভট্টাচার্য হলো প্রত্যক্ষদর্শী, যে দেখেছে গতকাল মন্দির থেকে ইসকনভক্তরা গতকাল মুসলমানদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল। এই অর্ণব ভট্টাচার্য এর আরো কিছু কমেন্ট নিন্মরূপ-
//Rahul Chakraborty আত্মরক্ষা করা উচিত কর্ম। তবে গুলি করার মত কাজ উগ্রবাদীরা করে।//
//ইসকন মন্দির একটু ধর্মিয় প্রতিষ্টান।।সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র আসে কিভাবে।।নাকি জঙ্গি ট্রেনিং করানো হয়।।//
//দীপু বাবু আমি জানি সিকিউরিটি আছে।।এবং এই সিকিউরিটি কর্মচারীরাও ইসকন ভক্ত।। আমার কথা হচ্ছে সিকিউরিটির কাছে পিস্তল আসলো কোথা থেকে???//
পরে ইসকনের হিন্দুরাও দম্ভভরে স্বীকার করে, তাদের মন্দিরে অস্ত্র রাখা আছে। যেমন Srinibas Chakraborty নামক একজনের মন্তব্য-
//ভগবানের ঘর মন্দির,, আর মূরতি যেন তোমাদের মত সেজে থাকা হিন্দু যেন ভাংজ্ঞতে না পারে সে জন্য মন্দিরে অস্র রাখা হয়েছে।//
Ratan Chakraborty আরেকজন তো স্বীকারই করলো যে, ইসকনীরা পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই পিস্তল ব্যবহার করেছে-
//।আর পিস্তলের কথা বললেন না? ওটা করত্যব্যরত পুলিশ উপস্থিত ফাকা গুলি ছুড়ে, কেননা আমি নিজে এই জায়গায় ছিলাম।ক্ষমা করবেন, বিড়ালের মত হাজার বছর বাছার চাইতে সিংহের মত একদিক ই বাচা স্রেও।//
এদিকে, সিলেটে মুসল্লীদের উপর ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে নামটি বেশি ওঠে আসছে, তা হলো- এসআই বেনু চন্দ্র দাস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, এসআই বেণু চন্দ্র দাস প্রথম মসজিদের ভেতর গুলি ছুড়ে। এবং সে গুলিতে মসজিদের ভেতর নামাজরত মুসল্লী আহত হন। তারা আরো বলছে, বেণু চন্দ্রই ইসকনীদের একত্র করে ইট-পাটকেল ছুড়তে বলে । ঐ দিন বেণু চন্দ্রের নেতৃত্বে পুলিশ হামলা অব্যাহত রাখে এবং মুসলমানদের গণগ্রেফতার করে।
এদিকে, ইসকন মন্দিরে জঙ্গি প্রশিক্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। সিলেটের ইসকন মন্দির থেকে মুসলমানদের উপর গুলির ঘটনার পর ‘ইসকন মন্দিরে গেরুয়াদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়’ এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই প্রশিক্ষণ শুধু এক যায়গায় নয় ‘আত্মরক্ষা প্রশিক্ষন সেমিনার’ ব্যানারে ইসকন অনেক আগেই বাংলাদেশে মন্দিরগুলোতে জঙ্গী ট্রেনিং শুরু করেছে বলেও তথ্য প্রকাশিত হয় ফেসবুকে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইসকনের রাজনৈতিক উইং হিন্দু মহাজোট ঢাকাস্থ রমনাকালী মন্দিরে হিন্দুদের মার্শাল আর্ট (Taekwon-Do) ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নিয়েছে।