শোলাকিয়ায় নিহত হামলাকারী আবির চার মাস নিখোঁজ ছিল

ঢাকা: কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রবেশপথে সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের গুলিতে নিহত জঙ্গির পরিচয় মিলেছে। তার নাম আবির রহমান। ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ গত পহেলা মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিল।

এ ব্যাপারে তার বাবা সিরাজুল ইসলাম সরকার গত ৬ই জুলাই ঢাকার ভাটারা থানায় জিডি (নং- ২৯৪) করেছেন।

 

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাসা থেকে গত পহেলা মার্চ আনুমানিক বেলা ৩টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তার ছেলে আবির রহমান নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেও তার কোন খোঁজ মিলেনি। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খাঁন পিপিএম নিহত সন্ত্রাসীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান শুক্রবার বিকালে বলেন, “নিহত হামলাকারীর পরিচয় আমরা জানতে পেরেছি। তার নাম আবীর রহমান। সে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছিল।”

২২ বছর বয়সী আবীরের বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম, বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। ঢাকায় তাদের বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে।

গুলশান হামলার পর নিখোঁজ ছেলে আবির রহমানের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় সিরাজুল ইসলাম সরকার জিডিটি করেন।

বৃহস্পতিবার শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত শুরু হওয়ার আগে সকাল সাড়ে আটটার কিছু পরে মুসল্লিবেশে শোলাকিয়া ঈদগাহে যাওয়ার পথে আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে দেহতল্লাশীর সময় একদল সন্ত্রাসী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে দায়িত্বরত ১১ পুলিশ সদস্যকে আহত করে।

হামলাকারীরা অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পুলিশের ওপর এই হামলা চালায়। তারা বোমা নিক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে চাপাতি নিয়ে পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তারা পুলিশ সদস্যদের জখম করে। এ সময় আহত পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করে।

তাদের মধ্যে কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপু (৩০) চেকপোস্ট সংলগ্ন মুফতি মোহাম্মদ আলী (রহ.) জামে মসজিদের সড়কের উপর অবস্থিত টয়লেটে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলে সেখানেই তাকে চাপাতি দিয়ে কোপায় হামলাকারীরা।

পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া করলে তারা সবুজবাগ এলাকার বাসাবাড়িতে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে তারাও দ্রুততার সঙ্গে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের এই গুলি বিনিময়ের সময় পুলিশের গুলিতে এক সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সে সময় তার পরিচয় জানা যায়নি। নিহত সন্ত্রাসীর নাম আবির রহমান এটি শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশ নিশ্চিত হয়।

এছাড়া আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপুর মৃত্যু হয়। অন্য আহতদের মধ্যে কনস্টেবল আনছারুল হক (২৮), রফিকুল, প্রশান্ত, তুষার, জুয়েল, মতিউর ও এএসআই মতিউরের অবস্থার অবনতি ঘটায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কনস্টেবল আনছারুল হককে ময়মনসিংহ সিএমএইচে নেয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে হামলাকারী সন্দেহে তিনজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলো, দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার রাণীগঞ্জ বাজার এলাকার আবদুল হাই-এর ছেলে শরীফুল ইসলাম আবু মোকাতিল (২০), কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশা এলাকার মো. আবদুস সাত্তারের ছেলে জাহিদুল হক (২৪) ও শহরের বয়লা এলাকার আবদুল হাই এর ছেলে আহসান উল্লাহ (২৫)। তাদের মধ্যে শরীফুল ইসলাম আবু মোকাতিল গুলিবিদ্ধ অবস্থায় র‌্যাবের হাতে আটক হয়। তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বন্দুকযুদ্ধে নিহত সন্ত্রাসী আবির রহমানের কাছ থেকে একটি ধারালো চাপাতি ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন আরো পাঁচজনসহ মোট সাতজনকে আটক করেছে।