ব্রিটেনে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ রেকর্ড উচ্চতায়, আর্থিক দুর্দশায় ২২ লাখ ব্রিটিশ

ডেস্ক: ব্রিটেনে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহণের মাত্রা ক্রমে বাড়ছে। ক্রেডিট কার্ড, ওভারড্রাফটস ও কার লোনের মতো সুরক্ষিত নয় এমন ঋণের আকার আর্থিক মন্দার পর প্রথমবারের মতো ২০ হাজার কোটি পাউন্ডের সীমা অতিক্রম করেছে। দেশটির আর্থিক খাতের পর্যবেক্ষণী সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটির (এফসিএ) তদন্তে, এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

সাধারণ গ্রাহকদের এ ঋণের ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। ওভারড্রাফটসে উচ্চসুদ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ফুলেফেঁপে ওঠা গাড়ি ঋণ বাজারও নজরদারির মধ্যে রেখেছে এফসিএ। খবর গার্ডিয়ান।

ঋণমান নির্ণায়ক সংস্থা মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিস সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান গৃহস্থালি ঋণ নিয়ে যুক্তরাজ্যকে সতর্ক করে। মুডি’স জানায়, দেশটির অনেক ঋণগ্রহীতাই তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করে যাচ্ছে। অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের বেতনের অর্থের পুরোটাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। মুডি’সের এ হুঁশিয়ারির পরই নড়েচড়ে বসেছে এফসিএ।

সংস্থাটির দেখা গেছে ক্রেডিট কার্ড, গাড়ি ক্রয় বাবদ ঋণ ও ওভারড্রাফটসের (ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থের চেয়ে বেশি ঋণ নেয়া) মতো ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ২০০৮ সালের শরতের পর সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। সে সময় ব্যাংক খাতের সংকট চরম আকার ধারণ করেছিল। ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর ঝুঁকিপূর্ণ বা সুরক্ষিত নয়, এমন ঋণগ্রহণের হার অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহণের পরিমাণ মন্দাপূর্ববর্তী সময়ের রেকর্ড ছুঁয়েছে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) সোমবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত, ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহণের হার ১০ শতাংশ বেড়ে ২০ হাজার ১০০ কোটি পাউন্ডে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এ ধরনের ঋণের অংক ২০ হাজার কোটি ডলারের সীমা অতিক্রম করেছিল।

অন্যদিকে এফসিএর এক নথিতে বলা হয়েছে, প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনই ক্রেডিট কার্ড, ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি ক্রয় বাবদ ঋণগ্রহণ করে থাকে। এ ধরনের ঋণের কারণে প্রায় ২২ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক আর্থিক দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই বয়সে তরুণ, সন্তান রয়েছে, বেকার ও তুলনামূলক কম শিক্ষিত। এর মধ্যে জীবনধারণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবারগুলো ঋণের ওপর আরো নির্ভরশীল হয়ে উঠবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নীতিনির্ধারকরা। আগে নেয়া ঋণ ফেরত দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চিত থাকার পরও জীবন-ধারণ ব্যয় মেটাতে ব্যাংক থেকে আবারো ঋণ নিচ্ছে তারা।
বিওইর আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগের প্রধান অ্যালেক্স ব্রাজিয়ার গত সপ্তাহে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে বলেন, খুব শিগগিরই ঋণ লাগামহীন হয়ে পড়বে। গোটা অর্থনীতিকেই এর মাশুল গুনতে হবে।

ব্রিটেনের শ্রমিক সংগঠন ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (টিইউসি) এক পূর্বাভাসে জানায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্রিটেনে পরিবারপ্রতি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের হার ১৩ হাজার ৯০০ পাউন্ডে পৌঁছুবে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। টিইউসির মহাব্যবস্থাপক ফ্রান্সেস ও’গ্র্যাডি বলেন, পরিবারগুলো কতটা আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিকতম তথ্যের মাধ্যমেই বোঝা যায়। মজুরি এখনো মন্দাপূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় কম। এ অবস্থায় পরিবারগুলো যদি চরমতর ঋণে নিমজ্জিত হয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। খেটে খাওয়া মানুষের কাছে অতিরিক্ত অর্থ না থাকলে ঋণের হার চক্রাকারে বাড়তেই থাকবে।
এদিকে, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের আশাবাদ ক্রমে কমছে। লয়েডস ব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতির ওপর দেশটির ব্যবসায়ীদের আস্থা বিগত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে। খবর রয়টার্স।

লয়েডসের জরিপ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের আস্থার প্রবৃদ্ধিতে খুব একটা গতি নেই। অবশ্য এক মাস আগের সঙ্গে তুলনা করলে এক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি চোখে পড়ে। সে সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান। এর প্রভাবে অর্থনীতির ওপর ব্যবসায়ীদের আস্থা আরো কমে যায়। তবে দীর্ঘ সময়ের গড়ের সঙ্গে তুলনায় ব্যবসায়ীদের আস্থা এখনো অনেক কম বলে জানিয়েছে লয়েডসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হ্যান-জো হু।