রিকশা চালিয়েই অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে এনামুল

খুলনা : শৈশবেই বুঝতে পেরেছিলেন তার জীবন আর দশ জনের মতো নয়। জীবনের অনেক বন্ধুর পথ তাকে পাড়ি দিতে হবে। সংগ্রামী এনামুলের জীবন সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি।

জীবিকার তাগীদে ছোট দুটি হাতে রিকশা-ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরেছিলেন শৈশবে। যা আর ছাড়া হয়নি এনামুলের। এখনো প্যাডেল না ঘোরালে আহার জোটে না, চলে না সংসার। মা-বাবা-ভাইকে নিয়ে থাকতে হয় অনাহারে। জোগাড় হয় না নিজের ও ছোট ভাইয়ের পড়া-লেখার খরচ।

পুরো নাম মুহম্মদ এনামুল হক। দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে তিনি রিকশা চালিয়েই করছেন পড়াশোনা। খুলনার বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন এনামুল। পাশাপাশি ছোট ভাই আশরাফুলকেও একই কলেজের বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তি করেছেন। একমাত্র বোন জান্নাতুল ফেরদৌসকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করিয়ে বিয়েও দিয়েছেন।

একদিকে নিজের ও ছোট ভাইয়ের পড়াশুনা, অন্যদিকে জটিলরোগে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এখন স্বপ্ন দেখেন সরকারি চাকরি পেয়ে জীবনের মোড় ঘুরানোর । সে লক্ষ্যেই ছুটে চলছেন অদম্য যোদ্ধা এনামুল।

পিতা-মাতার অভাব অনটনের সংসারে এনামুলের জন্ম। শত প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষা সংগ্রামে সে এক সাহসী সৈনিক। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বাদাম বিক্রি করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন এবং অষ্টম শ্রেণিতে করেছেন মাটি কাটার কাজ।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের দিনমজুর ফজলুর রহমানের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে এনামুল সবার বড়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ফজলুর রহমানের সংসার চালানোই ছিল দায়। একদিন তিনি ছেলেকে ডেকে বলেন-এভাবে শুধু লেখাপড়া করলেই চলবে না সংসারেরও খরচ চালাতে হবে। এনামুল তখন অভিমান করে গ্রাম থেকে খুলনা শহরে চলে এসে রিকশা চালানো শুরু করেন। রিকশা চালিয়েই ২০০৮ সালে মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১০ সালে কেশবপুর শহীদ লে. মাসুদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১১ সালে সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হন।

অনার্স শেষ করে তিনি এখন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অনেকের সহযোগিতায় একটি রিকশা কেনেন। জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে চান না এনামুল।

এনামুল প্রসঙ্গে সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপ-অধ্যক্ষ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর শিকদার মনিরুজ্জামান জানান, এনামুল খুব পরিশ্রমী ও মেধাবী ছাত্র। কষ্ট ও ত্যাগের মধ্যে দিয়ে এই পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছে সে।

রিকশা কেনার সময় কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি সমাজে সচ্ছল ব্যক্তিদের এনামুলকে সাহায্য করার জন্য আহ্বান জানান।

এনামুল হক জানান, লেখাপড়ার শেষ প্রান্তে এসে নিজের এবং ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ, মায়ের চিকিৎসার ব্যয় রিকশা চালিয়ে বহন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। একটি সরকারি চাকরির জন্য বিভিন্ন স্থানে আবেদনও করেছেন।একটি চাকরি পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনের মোড় ঘোরাতে সক্ষম হতেন।

এনামুল প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল এবং সমাজের বিত্তবানদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।