আমদানিকৃত চালের দাম বাড়ছেই, বাড়ছে পেঁয়াজের দামও

আবারো হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা করে। ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানীতে এলসির বিপরীতে টন প্রতি ৩০ মার্কিন ডলার বাড়িয়ে ৪শ ২০ থেকে সাড়ে ৪শ ডলার নির্ধারণ করেছে। তাছাড়া দেশেও ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে বলে জানান চাল আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা।

আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা বলেছেন, কয়েক দিন আগেও প্রতি ট্রাকে ১৮ থেকে ২০ টন চাল যে ভাড়ায় মোকামে পৌঁছাতো, এখন কমে গিয়ে ১৫টন চাল পরিবহন করছে একই ভাড়ায়। হিলি কাস্টম্স জানান, গত এক সপ্তাহে ২০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে। চালের ব্যবসায়ীরা আরো বলছেন, ভারতে চালের দাম উঠানামা করায় প্রভাব পড়ছে।

বাড়ছে পেঁয়াজের দামও-
এদিকে কোনোভাবেই কমছে না পেঁয়াজের দামও। স্থিতিশীলও থাকছে না, বরং বড়ছেই। বলতে গেলে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ৯০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে দেশী পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে (খুচরা) ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে। যেখানে মাত্র তিনমাস আগেও দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠার মৌসুমে দাম এত বৃদ্ধিতে কপালে ভাঁজ ক্রেতাদের। দাম বাড়ার কারণ কী? খুচরা ব্যবসায়ীদের একটাই উত্তর, পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ী মানেই মুখে পুরনো বুলি- সঙ্কট, সরবরাহ নেই!

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও শান্তিনগর বাজারের খবর নিয়ে জানা গেছে, দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা। গত সপ্তাহে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯৫ টাকায়। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকায়। বাজার দরের সঙ্গে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইটের তথ্যে মিল নেই। তারপরও টিসিবি’র তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।

শুক্রবার প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ঢাকার বাজারে বিক্রি হয়েছে ১১০-১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯৫ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে ৩৯ শতাংশ বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫-১০ টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে দেশী পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের ২৫-৩০ টাকা। কারওয়ান বাজারের এক পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। মজুদ প্রায় ফুরিয়ে আসায় দাম বাড়ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ভারতে দাম বাড়ার কারণে।

কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভই দায়ী। ভারত থেকে আমদানি স্বাভাবিক থাকায় গত মাসে পেঁয়াজের দাম এক দফা বাড়ার পর আবার কমতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করে ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পায়। এ সুযোগ নিতে অনেক আমদানিকারক কম দামে পেঁয়াজ কিনেও সেগুলো বাংলাদেশে আনছেন না। এ কারণে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, সরকারের নজরদারির কারণে এখন ওই পেঁয়াজ খালাস শুরু হয়েছে। ওই পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। এজন্য ১-২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। কৃষি পণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বলেন, চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সঙ্কট থাকায় দাম বাড়ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে দাম বাড়লেও পরে আমদানি স্বাভাবিক হওয়ায় পেঁয়াজের দাম কমেছে। এবারও আমদানি বাড়লে দাম কমবে।