চাল মজুদ: কালো তালিকাভুক্ত ১৬ হাজার মিলার

অবৈধভাবে চাল মজুদ করায় ১৬ হাজার মিল মালিককে তিন বছরের জন্য ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার কথা জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, কালো তালিকাভুক্ত এসব মিলারদের কাছ থেকে আগামী তিন বছর সরকার চাল কিনবে না।

কামরুল বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীরা হাওর অঞ্চলে বন্যার পর থেকেই চাল মজুদ করেছিল। আমরা যে ক্রয়মূল্য (৩৪ টাকা) দিয়েছিলাম, বাজারের মূল্যের সঙ্গে বিরাট ফারাক ছিল। ফলে আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি।

অসৎ চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “যেসব মিল মালিকরা অসাধুভাবে চাল মজুদ করেছে তাদের আমরা তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা আর চাল কিনব না। সংখ্যা লক্ষাধিক।”

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর ডান পাশে বসে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বদরুল হাসান এ সময় নিচুস্বরে মন্ত্রীকে বলেন, “না হাজার।” মন্ত্রী বলেন, “কয় হাজার?”
ডিজি বলেন, “মোট তো ১৮ হাজার এর মধ্যে ১৬ হাজারের মত হবে।”

এরপর কামরুল বলেন, “আমি স্যরি। ১৬ হাজারের মত সেই সংখ্যা, সেই সংখ্যা হচ্ছে ১৬ হাজার, যাদেরকে আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি।”

বাংলাদেশে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত চালকলের সংখ্যা জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান পরে বলেন, “দেশে প্রায় ২০ হাজার মিল আছে, যাদের মধ্যে ১৬ হাজার মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।” সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত চার হাজার মিল থেকে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা সম্ভব কি না- এ প্রশ্নে বদরুল বলেন, “সরকার অভ্যন্তরীণভাবে ১০ থেকে ১২ লাখ টন চাল সংগ্রহ করে। এই পরিমাণ চাল দুই থেকে আড়াই হাজার মিল থেকেই সংগ্রহ করা যাবে।”

মজুদ কত- বললেন না মন্ত্রী:
বর্তমানে দেশে কি পরিমাণ চাল মজুদ আছে তা জানতে সাংবাদিকরা দফায় দফায় প্রশ্ন করলেও উত্তর দেননি খাদ্যমন্ত্রী। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরাও চালের প্রকৃত মজুদ নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। মজুদ কম থাকায় চালের দাম বেড়েছে- এমন প্রশ্নে কামরুল বলেন, “এটা যারা বলেছে তারা ভুল ব্যাখ্যা করছে। আমরা শুধু সরকারি বিতরণ ব্যবস্থায় চাল সরবারহ করি।” বর্তমানে চালের মজুদ কত- এই প্রশ্নে কামরুল বলেন, “পর্যাপ্ত মজুদ আছে।”

চালের মজুদ নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়ার কথা একজন সাংবাদিক জানালে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের যে ব্রিফ করলাম আমাদের পর্যাপ্ত মুজদ আছে, এখন এই মুর্হূর্তে ত্রাণ তৎপরতা ছাড়া খরচ করার অন্য কোনো খাত নাই। সেপ্টেম্বরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আসবে। যে কোনো ব্যাপারে সহায়তা দেয়ার মত যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুদ আছে, মজুদ কেবল বাড়ছেই।”

মজুদ কতটুকু- আবারও এমন প্রশ্নে কামরুল বলেন, “আমি আর কিছুই বলতে চাই না। “আমি বলতে চাই, ট্যারিফ উঠিয়ে দেয়ার পর ঈদের পর থেকে ভারত থেকে বেসরকারিভাবে ৮৪ হাজার টন চাল দেশে এসেছে। এখন আমাদের কোনো রকম সমস্যা নাই, অভ্যন্তরণীভাবেও চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।”

অগাস্টের মধ্যে আসবে আড়াই লাখ টন চাল:
খাদ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বেসরকারিভাবে ভারত থেকে চাল আসার পর মজুদকরীরা এখন ধরে রাখা চাল বাজারে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের প্রথম চালানে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল নিয়ে একটি জাহাজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এসেছে জানিয়ে কামরুল বলেন, “কিছু কাস্টমস ফরমালিটিজ আছে, সেগুলো যদি আজকে শেষ হয় তাহলে কালকে সকাল থেকে খালাস করতে পারব। আর ফরমালিটিজগুলো যদি আজকে শেষে হতে বিলম্ব হয় তাহলে রোববার খালাস হয়ে যাবে।”

ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে মোট আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় চালানে ১৮ জুলাই ২২ হাজার টন এবং ৩০ জুলাই ২১ হাজার টন ও ৩০ হাজার টনের চালান দেশে আসবে বলে জানান কামরুল।
ভিয়েতনামে বাকি চাল জাহাজে তোলা শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আগামী ১৫ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সব চাল লোডিং শেষ হবে, এরপর আসতে যতটুকু সময় লাগে।”

সরকারিভাবে চাল আনতে চারটি টেন্ডার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারও আরেকটি টেন্ডার হচ্ছে। টেন্ডারে ৪০ দিনের মধ্যে চাল সরবারহ করতে বলা হচ্ছে। ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকেও সরকারিভাবে চাল আসছে। “সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন চাল পাইপ লাইনে আছে। যে চালগুলোর বেশিরভাগ এই মাসের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ অগাস্টের মধ্যে সাড়ে চার লাখ টন চাল আমাদের ঘরে চলে আসবে। আমরা আশা করছি এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। টেন্ডার হতেই থাকবে, টেন্ডার বন্ধ থাকবে না, টেন্ডার চলতেই থাকবে।” তিনি জানান, আগামী ১৬ জুলাই ভারতের একটি প্রতিনিধি দল এবং ২৮ জুলাই থাইল্যান্ডের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের সঙ্গে বসে দরদাম ঠিক কের জিটুজি ভিত্তিতে চাল আনা হবে।