রোজার আগেই অস্থির ছোলা ও চিনির বাজার
ঢাকা: আসন্ন রোজার মাসকে কেন্দ্র করে লএখনই অস্থির হয়ে উঠেছে ছোলা ও চিনির বাজার। ৪২ টাকা কেজি দরের চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, ৫২ টাকার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক মাসের ব্যবধানে এ দু’টি পণ্যের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। খুচরা বাজারে তা বেড়েছে আরও বেশি। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় বাজারেও পণ্য দু’টির দাম বেড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর শ্যামবাজার ও কাওরানবাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় বিশাল মজুদ গড়ে তুলেছেন। কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের দোতলায় গড়ে তোলা হয়েছে ছোলা ও চিনির অবৈধ গুদাম।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দাবি, আমদানিকারক সিন্ডিকেট প্রতিবছর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করে তোলে। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানে দেশে ছোলার চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টন। এই মুহূর্তে দেশে মজুদ আছে প্রায় আড়াই লাখ টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ১২ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়। একইভাবে প্রতিমাসেই ছোলা আমদানি হচ্ছে। গত অর্থবছরও প্রায় ৮ লাখ টন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। এ হিসাবে রোজায় ছোলার কোনও সংকট হওয়ার কথা নয়।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়। অথচ গত এক দেড় মাস আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। কাওরানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা বেশি দরে। কয়েকমাস ধরে শুল্ক ও সরকারি মূল্য বৃদ্ধির কারণে চিনির বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সদর আলী বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, চিনি ও ছোলার ব্যাপক মজুদ আছে। বাজার অস্থির হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরেও বাজার মনিটরিং চলছে। কোথাও মজুদ বা অনিয়মের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি চোখে পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ ছাড়া পাবে না।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, অন্যান্য বছরের মতো এবছরও রমজানে কোনও পণ্যের সংকট হবে না। রমজানে প্রয়োজনীয় সব পণ্যের মজুদ রয়েছে। দামও স্থিতিশীল থাকবে। তারপরও রমজানকে কেন্দ্র করে কেউ বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে সরকার বসে থাকবে না।
আসন্ন রমজানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর, ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের বাজার নিয়ন্ত্রণে চার-পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একাধিক মনিটরিং কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছেন ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্য ভেজাল ও ফরমালিমুক্ত রাখতে ব্যবসায়ী এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশও দেওয়া হবে এবার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সরকারের মনিটরিং না থাকার সুযোগে সুবিধাভোগী অসৎ ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে। বাজারে এত কিছু হচ্ছে তারপরেও সরকারের কোনও তদারকি বা মনিটরিং নেই। মনিটরিং না থাকলে অসাধু ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। সরকারি মনিটরিংয়ে দুর্বলতা থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যায়।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সদর আলী বিশ্বাস বলেছেন, বাজার তো স্থিতিশীল। জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তাই ওইভাবে আর সারাবছর মনিটরিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সদর আলী বিশ্বাস জানান, মনিটরিং টিম পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক সময় বাজার অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যায় না। আবার ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাওয়া যায় না। এ সব সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই মনিটরিং টিম পরিচালনা করতে হয়। তাই নিয়মিত মনিটরিং করা সম্ভব হয় না।
জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। সামনে রোজা শুরু হচ্ছে। রোজাকে কেন্দ্র করে বাজার যাতে অস্থিতিশীল না হয় সেদিকে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে। আর বাজার অস্থির হলে তো অবশ্যই মাঠে মনিটরিং শুরু হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এক কথায় সবই হবে।