প্রাক–বাজেট ২০১৭–১৮: রডে ৯০০ টাকার মূসক হচ্ছে ৭,৫০০ টাকা!

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১৫ শতাংশ বহাল থাকলে প্রতি টন রডের দাম বাড়বে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি টন রডের দাম বর্তমানে যেখানে ৫০ হাজার টাকা, আগামী ১ জুলাইয়ের পর তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা।
জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল বুধবার স্টিল ও অটো-রিরোলিং খাতের তিন সমিতির যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়েছে। সমিতিগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সমিতিগুলো বলেছে, প্রতি টন রডে বর্তমানে মূসক দিতে হয় ৯০০ টাকা। এক লাফে তা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। এতে একদিকে সরকারি-বেসরকারি সব অবকাঠামো নির্মাণেরই ব্যয় বেড়ে যাবে, অন্যদিকে বিলম্বিত হবে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন। তাই অন্তত আগামী নির্বাচনের আগে রডের দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া সরকারের ঠিক হবে না।
ক্রয় পর্যায়ে রডের কাঁচামালে কোনো মূসক না রাখা এবং বিক্রি পর্যায়ে এমএস রড, এমএস বিলেট ইত্যাদিতে ৩ থেকে ৫ শতাংশ মূসক নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সমিতিগুলো। ক্রয় পর্যায়ে বর্তমানেও কোনো মূসক নেই।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাঝে মাঝে সরকারকে জনগণের কথা শুনতে হবে। আবার জনগণকেও শুনতে হবে সরকারের কথা। সামনে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনেক পথ বাকি। কিন্তু এই সময়ে এসে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপে গোটা খাতের জন্যই খারাপ হবে। এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মহাসচিব হ‌ুমায়ূন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘১৫ শতাংশ মূসক চাপিয়ে দেবেন কেন? মূসক আমরা দেব কিন্তু তা সহনশীলতার মধ্যে রাখতে হবে। অনুরোধ থাকবে আগামী নির্বাচনের আগে সরকার নতুন হারে মূসক আরোপ করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি মারতেই থাকেন, মারতেই থাকেন, মরে যাব তো! তখন কিন্তু অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী কেউই বাঁচতে পারবেন না।’
মূসক দেবেন ভোক্তা, ব্যবসায়ীরা শুধু আদায় করে দেবেন, তাহলে সমস্যা কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাবে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভোক্তাদের হয়েই কথা বলছি। কারণ, আমরা জানি, ভোক্তাদের ভোগের সীমাটা কত দূর পর্যন্ত আছে।’

বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাহবুবুর রশিদ বলেন, রডে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করলে স্টিল শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ব্যাহত হবে অবকাঠামোর উন্নয়ন ও আবাসন নির্মাণ। রডের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে। এ ছাড়া দেশের অবকাঠামো নির্মাণের চলমান প্রকল্প বা চুক্তির ব্যয়ও বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আবাসন খাত এমনিতেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বাড়তি মূসকে আবাসন খাতেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ইস্পাতশিল্প খাতে মূসক বর্তমানে ১ শতাংশেরও কম। বড়জোর তা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা যেতে পারে। কিন্তু ৫ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই নয়। কিন্তু ১৫ শতাংশ মূসক হবে পুরো খাতের জন্যই বড় বোঝা।