প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সই হতে পারে ২৪ চুক্তি

ডেস্ক: ভারতের সঙ্গে বরাবরই বাংলাদেশের স্পর্শকাতর কূটনৈতিক সর্ম্পক বিদ্যমান। দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের করা অনেক চুক্তির ফায়দা থেকে এখনো বঞ্চিত বাংলাদেশ। এসব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর পেতে যাচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এবং ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে ন্যায্য পাওনা দাবি দাওয়াসহ নতুন করে এই সফরে দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২৪টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও দলিল সই হতে পারে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এসব চুক্তির মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন, গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, নৌসীমায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি, ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ প্রভৃতি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে গুরুত্ব পাবে।

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী ৭ এপ্রিল ভারত যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে সম্প্রতি নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামে দুটি সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ব্যবহারের জন্য চীন থেকে কেনা এই সাবমেরিন দুটির বিষয়ে কথিত বন্ধু দেশ ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুব একটা ইতিবাচক নয়। সদ্য পদত্যাগ করা ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর গত নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে চীনের সাবমেরিনের বিষয়ে দিল্লির অবস্থান জানিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের নৌসীমায় কোস্টগার্ডকে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে ভারত সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে দাবি জানিয়েছিলো ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হতে পারে বলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন জানিয়েছেন।

দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যও ভারতের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন মহলে। এছাড়া বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়েও বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের অংশ হিসেবে ১৩ মার্চ সোমবার ভারতীয় হাইকমিশনে দেশের অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে মতবিনিময় করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার।

তবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারে চুক্তি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যম এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এবার একগুচ্ছ চুক্তি সই হতে চলেছে।’

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘সরকারি সূত্রে খবর, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ছাড়াও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, পায়রা বন্দরে মাল্টিপারপাস (কন্টেইনার) টার্মিনাল নির্মাণ, লাইটহাউজেস ও লাইটশিপস, কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী এবং ক্রুজ সার্ভিস সংক্রান্ত বিষয়ে দু-দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে, এবার তা চুক্তি হিসেবে রূপ নিতে পারে।’

এক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভারতের বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী লেভি পাবে বাংলাদেশ। শুল্ক ও বন্দরের চার্জও ভারত দেবে। অন্যদিকে পায়রা বন্দরের কাজকে ১৯টি কম্পনেন্টে ভাগ করা হয়েছে। এর একটি কম্পনেন্টে ভারত শর্তসাপেক্ষে সহায্য করতে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রায় ভারতের ‘ইন্ডিয়ান পোর্ট গ্লোবাল’ নামে একটি সংস্থা টার্মিনাল বানাবে। এ ছাড়াও ভারতের আরও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্যাসেঞ্জার ক্রুজ সার্ভিস জাহাজ চালাচলের বিষয়েও আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিস্তার পানিবণ্টন সংক্রান্ত চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায়।

তবে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, এর আগে ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলো তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির খসড়া করা রয়েছে। শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির কোন সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি কোনও সময় বেঁধে দিতে পারি না। তবে মোদী সরকার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।

বাংলাদেশের নৌ-সচিব অশোক মাধব রায়ের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘এই সময়’ উল্লেখ করেছে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় দু-দেশের নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে, তা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরেই দু-দেশের মধ্যে চুক্তি হয়ে যেতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের বিষয়টি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সফরকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণাও শুরু করেছেন বিএনপির প্রথম সারির নেতারা।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে কোনো কিছুই করার পক্ষে নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে কোনো চুক্তি হতে পারে।’ তার এই কথার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, ‘বেশকিছু চুক্তি হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে।’

ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে সামরিক, বেসামরিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক চুক্তি হতে পারে। আমেরিকা এবং রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দেশের সামরিক চুক্তি আছে। গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি আছে।-আল ইহসান