তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত ফেতুল্লা গুলেন বন্ধু থেকে বিশ্বাসঘাতক

ডেস্ক: তুর্কি সাংবাদিক এজগি বাসারান বিবিসির জন্য লেখা তার এক বিশ্লেষণে বলেছেন, ১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পেছনে কারা ছিল তা নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব বা ‘থিওরি’ বিভিন্ন মহলে ঘুরছে। এরমধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেন- তুরস্কের সামরিক বাহিনীর মধ্যে এরদোগানপন্থী ছাড়াও দুটি গোষ্ঠী আছে। একদল হচ্ছেন যারা কামাল আতাতুর্কপন্থী যারা ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবসম্পন্ন (ইসলামপন্থী নয়)। আরেকটি গোষ্ঠী হচ্ছে একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা – বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী। এই গুলেন একসময় এরদোগানের বন্ধু ছিলেন, তবেপরে তাদের মধ্যে শত্রুতা এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বলা হয়, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় স্তরের গভীরে সর্বত্র গুলেনের সমর্থকরা বসে আছে – কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা খুবই কঠিন।

এই তত্ত্বের বিশ্লেষকদের মতে, কামাল আতাতুর্কপন্থী অফিসাররা গুলেনপন্থীদের কৌশলে নিজেদের দলে টেনে নিয়ে এই অভ্যুত্থানটি ঘটানোর চেষ্টা করে।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান এর আগে তার ভাষায় একটি ‘সন্ত্রাসবাদী সমান্তরাল রাষ্ট্রের হাত থেকে’ দেশকে মুক্ত করার কথা বলেছেন, এবং বিভিন্ন সময় এদের ‘খুঁজে বের করা ও গ্রেপ্তারের’ অভিযান চালিয়েছেন।

আরেকটি তত্ব এসেছে পুলিশের বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাদের বক্তব্য- এরদোগানের একে পার্টি সরকার গুলেন-সমর্থক সামরিক কর্মকর্তাদের চক্রান্তের বিষয়ে কিছুটা আগেই টের পেয়েছিল। যে কারণে ১৬ জুলাই তারিখেই গুলেন-সমর্থক কিছু সামরিক কর্মকর্তার শাস্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। যা টের পেয়ে অভ্যুত্থানকারীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্রোহ ঘটিয়ে ফেলে। এটাই ছিল গুলেন সমর্থকদের ক্ষমতা দখলের একটা শেষ চেষ্টা।

একেপির সরকার অবশ্য বলছে, একজন সামরিক কৌঁসুলি এ অভ্যুত্থানের পেছনে ছিলেন, তার সাথে ছিলেন আরো ৪৬ জন অফিসার। এদের নাম শনিবার গভীর রাতে প্রকাশ করা হয়েছে।

তুরস্কের স্থানীয় গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যে সব বিশ্লেষণ এসেছে সবখানেই ফেতুল্লা গুলেনের নামটি এসেছে। আগে-পরের পরিস্থিতির আলোকে তুরস্কের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীরও বদ্যমূল ধারণা- এ কাজটি গুলেনপন্থীদের দ্বারাই ঘটেছে।

এছাড়া তুরস্কে শুক্রবার রাতের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনকে সরাসরি দায়ী করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। যদিও গুলেন ও তার সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তিনি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার নিন্দাও করেছেন। স্বীকার-অস্বীকার যা-ই করুন, অভ্যুত্থানের ঘটনার পর ফেতুল্লা গুলেন আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশ্বজুড়ে তাকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ঔৎসুক্য।