সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ত সন্দেহে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষক!
ঢাকা: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে ঘিরে বাড়ছে সন্দেহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়ানোর পেছনে ওই শিক্ষকদের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি কিছু শিক্ষক সরাসরি সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ত বলেও জানতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্তদল। সন্দেহের তালিকায় আছেন মূলত নর্থ সাউথের তিনটি বিভাগের জনাদশেক শিক্ষক। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির যেসব শিক্ষার্থীর সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে তারাও ওই তিন বিভাগেরই।
ইউজিসির একটি তদন্তদল গত ১৪ জুলাই এনএসইউ পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে তদন্ত কমিটি বেশ কিছু তথ্য জানতে চায়। ১৫ দিনের মধ্যে এনএসইউ কর্তৃপক্ষের এসব তথ্য পাঠানোর কথা রয়েছে। যে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে তাদের সহপাঠীদের সঙ্গেও কথা বলেছে তদন্তদল। শতাধিক ছাত্র ও ৮-১০ জন শিক্ষক সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত বলে সন্দেহ করছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কেও সন্দিহান তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এনএসইউয়ের ১৫ জন বিদেশি শিক্ষকের মধ্যে ১০ জনেরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাকিস্তানের ১০ জন ও মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশের ১৩ জন সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষকরা জড়িত না থাকলে তো শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী হওয়া সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে আমরা জেনেছি, কিছু শিক্ষকও সন্ত্রাসবাদে জড়িত আছেন। আমরা অনুপস্থিত বা নিখোঁজ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কিছু শিক্ষকের ব্যাপারেও তথ্য চেয়েছি। এনএসইউ কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে তথ্য দেবে বলে জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মতো কাজ করছে, আমরাও আমাদের মতো কাজ করছি। আমাদের পাওয়া তথ্যও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া হবে।’
জানা যায়, নাস্তিক খ্যাত ব্লগার রাজীব হত্যায় অংশ নেওয়া নর্থ সাউথের সাত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এদের মধ্যে ছয়জন ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাস ইসলাম বিজনেস ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থী ছিল। পুলিশের সন্দেহে থাকা হাসনাত রেজা করিমও একসময় ছিলেন ওই ফ্যাকাল্টির শিক্ষক। তবে গ্রেপ্তার হওয়া অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহসান পাবলিক হেলথের ডিন এবং ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে শোলাকিয়ায় হামলায় নিহত এক সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রকাশিত তালিকার ১০ জনের মধ্যে দুজন এনএসইউয়ের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সিরিয়ায় যাওয়া চিকিৎসক পরিবারের দুই সদস্যও নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাধিক শিক্ষকের যোগসূত্র রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এমনকি ট্রাস্টি বোর্ডেরও কেউ কেউ এই কাজে ম“ দিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
ইউজিসির তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, এনএসইউয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধীনে পড়ানো হয় ইটিই ও ইইই। অভিযোগ উঠেছে, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষক এনএসইউয়ে যোগদানের আগে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সৌদি আরবে ছিলেন। তাঁর প্রতিও রয়েছে সন্দেহ।
জানা যায়, শিক্ষকদের একাংশের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়া নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। এনএসইউ উপ-উপাচার্যকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান ড. মোস্তাফিজুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে ইউজিসির তদন্তদল এনএসইউ লাইব্রেরিতে হিযবুত তাহ্রীরের একাধিক বই পেয়েছিল।
এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ দমনে আমরা খুবই কঠোর। পুলিশ উপ-উপাচার্যকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরাও তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করেছি। আর ইউজিসি আমাদের কাছে যেসব তথ্য চেয়েছে এর সব কিছুই আমরা দেব। এখনো সময় আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ইউজিসিকে সব তথ্য দেব।’
শিক্ষকদের কারো কারো সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে এনএসইউ ভিসি বলেন, ‘ইউজিসি অনেক তথ্যই চেয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা এ বিষয়ে বলতে চাচ্ছি না। তবে জড়িত থাকলে কেউ ছাড় পাবে না।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এনএসইউ কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার থেকে অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে। গতকাল সকালে ও বিকেলে দুই হাজার অভিভাবকের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। আজও দুই হাজার অভিভাবকের সঙ্গে মতবিনিময় করবে কর্তৃপক্ষ। গতকাল মতবিনিময়কালে অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা খুবই চিন্তিত বলে জানান। যেভাবেই হোক এনএসইউ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তাঁরা। – কালের কন্ঠ