মিতু হত্যা: শিবির কর্মী গ্রেপ্তার, চালকসহ মাইক্রোবাস আটক

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় জড়িত সাবেক শিবির ক্যাডার আবু নছর গুন্নুকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সাবেক এই শিবির ক্যাডার দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে থাকলেও ৫ বছর আগে তিনি দেশে ফেরেন। ফিরেই হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদের একটি মাজারে খাদেম হিসেবে যোগ দেন তিনি। মিতু হত্যায় আবু নছরের সম্পৃক্ততা আছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আবু নছর হাটহাজারী উপজেলার মৃত মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।

বুধবার (৮ জুন) সকালে ফতেয়াবাদ থেকে আবু নছরকে গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য দুপুরে সিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

এদিকে, মাহমুদা আক্তার হত্যাকাণ্ডে ‘ব্যাকআপ’ হিসেবে ব্যবহৃত কালো মাইক্রোবাসটি চালকসহ আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে নগরীর ভেতর থেকে চালকসহ মাইক্রেবাসটি আটক করা হয়।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার। তবে বিষয়টি খোলাসা না করে এ বিষয়ে আগামীকাল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।

মিতু হত্যা মাইক্রোবাস আটক
ছবিতে ভিডিও ফুটেজে ধারণকৃত কালো মাইক্রোবাস

জানা গেছে, জব্দ হওয়া এই কালো মাইক্রোবাসটি চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ অব কোম্পানির গাড়ি। যেটিকে মিতু হত্যার মিশনে ব্যাকআপ টিমকে বহনকারী গাড়ি হিসেবে সন্দেহ করছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এই গাড়ির চালক কোম্পানির অগোচরে জেএমবির কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। কেননা এরআগে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর সদরঘাটের বাংলাবাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় এক ব্যবসায়ীসহ তিনজন নিহতের ঘটনায় (পরে দুই জন জেএমবি সদস্য হিসেবে চিহ্নিত) ৫ অক্টোবর খোঁয়াজ নগর থেকে আটক পাঁচ জেএমবির একজন শাহজাহান কাজল সেই কোমল পানীয় বিপণন প্রতিষ্ঠানে চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এর আগে রোববার রাতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে মোটর সাইকেলটির নম্বর প্লেটটি ছিল ভুয়া। এই নম্বরের প্রকৃত মালিকের কাছে তার মোটর সাইকেলটি নিজ হেফাজতেই রয়েছে। তবে উদ্ধার হওয়া গাড়ির চেচিস ও ইঞ্জিন নম্বর থেকে এর প্রকৃত মালিককে খুজে বের করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

পরে সোমবার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিলেও সম্পৃক্ততা না পেয়ে তাদের প্রত্যেককে ছেড়ে দিয়েছে নগর গোয়েন্দা ‍পুলিশ।

সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা যখন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করছিল, তখন জিইসি মোড়ের দিকে কিছুটা অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল একটি কালো মাইক্রোবাস। মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার ১০ সেকেন্ডের মাথায় ঘটনাস্থলে আসে মাইক্রোবাসটি। পাঁচ সেকেন্ডের মতো ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে চলা শুরু করে মাইক্রোবাসটি।

পরে গোলপাহাড় মোড়ের দিকে চলে যায় ওই মাইক্রোবাস। কালো কাচের এ মাইক্রোর চালকের আসনের পাশের জানালাটা খোলা ছিল। অন্যসব জানালা বন্ধ ছিল। এ কারণেই গোয়েন্দারা মাইক্রোবাসের যাত্রীর সঙ্গে এ খুনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার জানান, হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি (চট্টমেট্রো-ল-১২-৯৮০৭) শুলকবহর বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এটি দিনভর সেখানে রাস্তার পাশে পড়ে থাকার পর রাতেও কেউ নিতে না আসায় সেটি জব্দ করা হয়।

পরে চেক করে জানা যায়, সেটিই হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। খুনিরা ওই এলাকায় মোটরসাইকেল রেখে নিরাপদে পালিয়ে যায়। পুরো এলাকাটি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। এজন্য এ ঘটনার সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সন্দেহের কথা জানা ইকবাল বাহার।