যেভাবে কার্যকর হলো ৩ সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যুদণ্ড
ঢাকা: রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পর কারাবিধি অনুযায়ী সন্ত্রাসবাদী নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হলো রাত ১০টায়।
ফাঁসি কার্যকরের প্রকৃয়া: গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে একে একে কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশ করতে থাকেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিকেল ৪টার দিকে ডিআইজি প্রিজন তৌহিদুল ইসলাম কারাগারে ঢোকেন। এরপরই কারাগারে নেওয়া হয় লাশ বহনকারী দুটি অ্যাম্বুলেন্স। এর কিছুক্ষণ আগে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটও কারাগারে প্রবেশ করে। রাত ৮টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন ও অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসানও কারাগারে প্রবেশ করেন। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম আলম, জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, জেলা সিভিল সার্জন সৈয়দ মঞ্জুরুল হকও কারাগারে প্রবেশ করেন।
সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, বুধবার রাত ১০টায় প্রথমে মুফতি হান্নান ও পরে তার সহযোগী বিপুলকে ফাঁসির মঞ্চে আনা হয়। একই মঞ্চের দুই পাশে একই সঙ্গে তাদের ঝোলানো হয়েছে। আগে থেকেই কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে প্রস্তুত ছিলেন চার জল্লাদ। কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান একটি রুমাল ফেলার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ রাজু ফাঁসির মঞ্চের লিভার ধরে টান দেন। তাকে সহায়তা করেন অপর তিন জল্লাদ রোমান, শরিফুল ইসলাম ও ইকবাল হোসেন। প্রত্যেককে প্রায় ২০ মিনিট ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে একাধিক দফায় চিকিৎসক তাদের শারীরিক পরীক্ষা করেন। মুফতি হান্নান ও বিপুলকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামানোর পর ময়নাতদন্তসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। এরপর হান্নানের মরদেহ কড়া নিরাপত্তায় তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় হিরণ গ্রামে দাফন করা হয়। বিপুলের মৃতদেহ পাঠানো হয় চাঁদপুর সদরের মৈশাদী ইউনিয়নের মৈশাদী গ্রামে। এর আগে রাতের খাবারের পর মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী বিপুলকে গোসল করানো হয়। তারা নামাজ আদায় করে। এর পর তাদের তওবা পড়ান কাশিমপুর কারাগারের ইমাম মাওলানা নোমানুর রহমান।
২০০৭ সালের ৩০ মার্চ একই সময়ে ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আবদুর রহমান, জেএমবির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসবাদীর। দীর্ঘদিন পর নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ তিন সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
১৯৯৯ সালে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলার মধ্য দিয়ে দেশে নাশকতা শুরু করে হুজিবি। এরপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে হামলাসহ অন্তত ১৩টি বড় ধরনের নাশকতা চালায় হুজিবি। এতে ১০৯ জন নিহত ও সাতশ’র বেশি লোক আহত হন।