ইসলামিক স্টেট (আইএস) আমেরিকার সৃষ্টি

নিতাই ভট্টাচার্য: মধ্যপ্রাচ্যের পথকে সুগম করতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ)-ই যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি গড়ে তুলেছে এ বিষয়টি এখন আর গোপন তথ্য নয় বরং ওপেন সিক্রেট। মধ্যপ্রাচ্যে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতেই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নামে নতুন এই জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যকে খণ্ড খণ্ড করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই সিআইএর পৃষ্ঠপোষকতায় জন্ম হয়েছে আইএসের। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আইএস গড়ে ওঠার পেছনে সিআইএর সহযোগিতার তথ্য ওঠে আসে।

ইরাকের উপপ্রধানমন্ত্রী বাহা আল আরাজি বলেছেন, ‘আমরা জানি, এটি (আইএস) কে তৈরি করেছে। এর পেছনে কে ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিল করার জন্য আইএস নামে ইসলামিক জঙ্গি তৈরি করে ইরাকে হামলা করছে। আইএস দমনে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইরাকে বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও বাগদাদের অলিগলি থেকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এই সন্দেহ রয়েছে যে, জঙ্গিগোষ্ঠীটির পেছনে রয়েছে সিআইএ।

ইরাকের  প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আল সদর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক সমাবেশের আহ্বান করেন। সমাবেশে আসা অধিকাংশ মানুষ বলেন আইএস একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি।

আইএসের নাম করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আবার ইরাকে ফিরে আসছেন বলে দেশটির মানুষের মনে ধারণা জন্মেছে।

হায়দার আল আসাদি নামের আরেকজন ইরাকি বলেন, আইএস সুস্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি। আইএসকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আবারও আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরাকের পর এবার সিরিয়ায় আগ্রাসন চালাতে আইএসকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচে যেন যুক্তরাষ্টের পৃষ্ঠপোকতায় সব কিছু হয় । তার জন্য এখানে একটি দীর্ঘ মেয়াদি ‍যুদ্ধের পরিকল্পনা নিয়েছ।

জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো মার্কিনিদের বিভ্রান্ত করতে যাচ্ছেন ওবামা। তিনি আইএস জঙ্গিদের দমনের কথা বলছেন। কিন্তু তাঁর মূল উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়। অঞ্চলটিতে নৈরাজ্য সৃষ্টি, বিদ্যমান সীমান্ত নিশ্চিহ্ন করা ও ক্রীড়নক সরকার বসাতে ওবামা প্রশাসন তৎপর।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিবেদনে রোববার এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি আইএসকে অর্থ জোগানদাতার ভূমিকাও পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস দখল নেয়ার পর ১২০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ সহায়তা পেয়েছে। এছাড়া জুনে মসুল বাঁধের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ২৪০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সুবিধা পেয়েছে।

বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী নগদ অর্থ সহায়তার অধিকাংশই আসছে কাতার, তুরস্ক ও সৌদি আরব থেকে। পলিটিসাইট ডটকম নামের একটি গবেষণাভিত্তিক ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে আইএসআইএল (বর্তমান নাম আইএস) মূলত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর হাতেই তৈরি।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ ড. কেভিন ব্যারেত প্রেস টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আইএসকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যকে আরও খণ্ড খণ্ড করার জন্য এবং বিভক্তি জিইয়ে রেখে মার্কিন স্বার্থ সংরক্ষণে আইএসকে গোপনে সহযোগিতা করছে আমেরিকা। খলিফা ঘোষণাকারী আল বাগদাদি সিআইয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ২০০৪-২০০৯ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বুস্কা কারাগারে ছিলেন বাগদাদি।

কেভিনের মত হচ্ছে, ইরাক সেনাবাহিনীকে মার্কিনিরা অস্ত্র সরবরাহ করলেও তা হাতছাড়া হয়ে যায় আইএসের কাছে।
তিনি বলেন, মালিকির সঙ্গে টানাপোড়নে ইরাক বাহিনীকে নিরস্ত্রীকরণ করা হয়েছে। আইএসের বর্বর আক্রমণের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র ইরাক বাহিনীকে সহযোগিতা না করে নতুন সরকার গঠনে চাপ প্রয়োগ করে এসেছে। ওদিকে সিরিয়ার বাশার আল আসাদ বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভিডিও: জেনারেল উইসলে ক্লার্কের বক্তব্যে আইএস আমেরিকার রহস্য

তথ্যসূত্র: Global Researchwtfrly,