ঈদ সামনে রেখে অবৈধ পথে আসছে কোটি টাকার পোশাক

ঢাকা: চোরাই পথে ও অন্যান্য বন্দর দিয়ে কম মূল্যে পণ্য শুল্কায়নের কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাপড়জাতীয় পণ্য আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় দাঁড়িয়েছে। গত এক মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১০ কনসাইনমেন্ট কাপড়জাতীয় পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বেনাপোল কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত পণ্য চালানের অতিরিক্ত মূল্যে শুল্কায়ন ও জরিমানা আদায় করার ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে মূলত চোরাই পথে পণ্য আনার ফলেই বৈধ উপায়ে আমদানি কমে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গত আট মাসে যশোর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা চোরাই পথে আসা ১৮ হাজার ৮৯২ পিস শাড়ি, ১২ হাজার ৮৪৩ পিস থ্রি-পিস, ৪০ হাজার ৯৪৯ পিস তৈরি পোশাক, ৫ হাজার ৭৫৮ মিটার থান কাপড়, ৩৫০টি নাইট ড্রেস, ৩৫টি লেহেঙ্গা ও ৪৮টি পাঞ্জাবি আটক করেছে। অভিযোগ রয়েছে, এটি চোরাই পথে আসা পণ্যের সামান্য একটি অংশ। বেশির ভাগ পণ্য পাচার হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। গতকালও বেনাপোলের দৌলতপুর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ২০ লাখ টাকার ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস ও কসমেটিকস আটক করেছেন বিজিবি সদস্যরা।

কাস্টমস, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে যশোরসহ দেশের সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে শাড়ি, থ্রি-পিস ও থান কাপড়ের চোরাচালান বেড়ে গেছে। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার পোশাক আসছে অবৈধ পথে। সড়ক, নৌ ও বিমানপথে অভিনব কৌশলে ভারতীয় পোশাক চোরাচালান হচ্ছে সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ভারতীয় পোশাক সীমান্তের প্রায় সব হাটবাজারসহ যশোর শহরের মার্কেটে এখন খোলামেলা বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, এক ট্রাকে ৯০ বেল শাড়ি ও থ্রি-পিস থাকে। ৯০ বেল কাপড়ের দাম ১ কোটি টাকা। আর এ পণ্যের আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। কলকাতা থেকে বৈধভাবে ওই পণ্য আমদানি করতে প্রায় এক মাস লেগে যায়। তাছাড়া বৈধ পথে আমদানি করলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এসব পণ্যে উচ্চ শুল্কায়ন করায় খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু পণ্য পাচার সিন্ডিকেট মাত্র ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ওই পণ্য কলকাতা থেকে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ নূরুজ্জামান জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য বৈধভাবে আমদানি হতো, সেগুলো এখন চোরাই পথে আসছে। আমদানিকৃত পণ্য চালানের ওপর বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত লোড চাপানোর ফলে ব্যবসায়ীরা এখন অবৈধ পথে পণ্য আনছেন। ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

যশোর ২৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মতিউর রহমান বলেন, গত আট মাসে বিজিবি সদস্যরা কয়েক কোটি টাকার পণ্য আটক করেছেন। এর মধ্যে কাস্টমসের ছাড়কৃত মালামালও রয়েছে, যাতে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হচ্ছিল।

যোগাযোগ করা হলে বেনাপোল কাস্টম কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান বলেন, আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে এ-জাতীয় পণ্য আসা ৯০ ভাগ কমে গেছে। কী কারণে কমেছে তা বলতে পারব না। অন্যান্য কাস্টম হাউজ ও শুল্কস্টেশন থেকে আমরা উচ্চ মূল্যে শুল্কায়ন করে থাকি। পণ্য চালানে কোনো অনিয়ম হলে আমরা জরিমানা আদায় করে পণ্য খালাস দিয়ে থাকি। এছাড়া শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরতে পারলে জড়িতদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিল, মামলা, অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।