মাগুরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘ডিফেন্স পার্টি’, আতঙ্কে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান

মাগুরা: সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা প্রতিরোধের নামে মাগুরায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় হিন্দু নারী-পুরুষদের দিয়ে গঠন করা হচ্ছে ‘লাঠি-বাঁশির ডিফেন্স পার্টি’। এসব ডিফেন্স পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার গ্রাম পুলিশ, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা, কৃষক, শ্রমিক, গৃহিনীসহ সর্বস্তরের মানুষকে। মাগুরা জেলা পুলিশের উদ্যোগে গঠন করা এসব ডিফেন্স পার্টি ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে।

সোমবার দুপুরে মাগুরা সদর উপজেলার আঠারোখাদা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, টেঙ্গাখালী ও শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে হাতে হাতে বাঁশের লাঠি আর মুখে বাঁশি নিয়ে শত শত নারী-পুরুষকে মহড়া দিতে দেখা গেছে।

জেলা পুলিশ সুপার এহসান উল্লাহ উপস্থিত থেকে ডিফেন্স পার্টির সদস্যদের উৎসাহ দিতে দেখা গেছে। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলো- জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা, শ্রীপুর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম, আঠারখাদা ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জীবন বিশ্বাসসহ ইউপি সদস্য ও গণমান্য ব্যক্তিরা।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার (এসপি) এহসান উল্লাহ বলেন, মাগুরা জেলাটি ৩৫ শতাংশ হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাইছে। সে কারণেই সন্ত্রাস, গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাসবাদ কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে মাগুরার বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় লাঠি-বাঁশির ডিফেন্স পার্টি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

এসপি আরো বলেন, ‘ডিফেন্স পার্টির সদস্যরা লাঠি-বাঁশি নিয়ে রাতে চলাফেরা করবে। কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার আশঙ্কা দেখলে তারা বাঁশি বাজিয়ে অন্যদের সজাগ করবে। সেই সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে। পুলিশ তাদের সহযোগিতা করবে।’

মাগুরা সদরের আঠারো খাদা ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জীবন বিশ্বাস বলেছে, একাধিক পুরোহিত হত্যার খবরে হিন্দুরা বেশ ভীত হয়ে পড়েছিলো। তবে লাঠি-বাঁশের ডিফেন্স পার্টি গঠনের ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এখন সাহসী হয়ে উঠেছে।

এদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের গঠিত এই ‘ডিফেন্স পার্টি’কে ‘দাঙ্গা পার্টি’ হিসেবে দেখছেন এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। এনিয়ে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার কথা জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ (৫৬) বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের আত্মীয় স্বজনের মতো। তারা এখানে যতোটা নিরাপদ, ভারতের হিন্দুরাও এতোটা নিরাপদ নয়। এখন বাংলাদেশের কোথায় কোন হিন্দু পুরোহিত খুন হচ্ছে সেটার জন্য সারাদেশের হিন্দুদের ভয় পাওয়ার কি আছে? দেশেতো প্রতিদিন অসংখ্য মুসলমান মারা যাচ্ছে, খুনের শিকার হচ্ছেন; তাই বলে আমরা কি মুসলমানরা আতঙ্কের মধ্যে আছি? মজিদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই ডিফেন্স পার্টিরাই কোন মুসলমানকে সন্ত্রাসবাদী বলে প্রচার করে নিরপরাধ মুসলমান মারবে। প্রশাসন সেই পথটিই তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলো।

আরেক ব্যবসায়ী মাজেদুল হক বলেন, কাজটা ঠিক হয়নি। নিরপরাধ মানুষের উপর হামলা করলে, বড়ধরণের দাঙ্গা লাগতে পারে।