স্মৃতিশক্তি ও মতিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় যে ভেষজ

অনলাইন ডেস্ক: জিঙ্কগো বিলোবা, সাধারণত জিঙ্কো নামে পরিচিত যা মেইডেনহেয়ার গাছ নামেও পরিচিত  চীনের একটি অতি প্রাচীন গাছ। এটি জিঙ্কগোয়েলসের শেষ জীবন্ত প্রজাতি, যা 290 মিলিয়ন বছর আগে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে জিঙ্কগো প্রজাতির জীবিত প্রজাতির অনুরূপ জীবাশ্মগুলি প্রায় 170 মিলিয়ন বছর আগে মধ্য জুরাসিক পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল।

এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, জিঙ্কো বিলোবা নামের এই ভেষজটির নির্যাস স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্ক আবারও কার্যক্ষম করে তুলতে পারে। চীনে ৩৩০ জন স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর ওপর ছয় মাস ধরে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা চালিয়েছেন একদল গবেষক। এতে তারা দেখেছেন স্ট্রোকের পর যাদের এই ওষুধ দেওয়া হয়েছে, তাদের মস্তিষ্ক ভালো কাজ করতে পারছে।

তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, ওই রোগীদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কেবল জিঙ্কো বিলোবাই কাজ করেছে কিনা তা এখনই জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। নানজিং ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুলে চীনের পাঁচটি হাসপাতাল থেকে রোগীদের নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়।

অনলাইন সাময়িকী স্ট্রোক অ্যান্ড ভাসকুল্যার নিউরোলজিতে এ গবেষণার ফল ছাপা হয়েছে। ওই সাময়িকীর অবশ্য স্বীকার করেছে, এ ব্যাপারে আরও ব্যাপক ও দীর্ঘ সময়ের পরীক্ষামূলক চিকিৎসা ও গবেষণা চালানো দরকার।

স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ৩৩০ জন রোগীকে এই ওষুধ খাওয়ানো হয়। রোগীদের গড় বয়স ছিল ৬৪। এদের মধ্যে অর্ধেক রোগীকে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেটের পাশাপাশি প্রতিদিন জিঙ্কো বিলোবা দেওয়া হয়। বাকি অর্ধেককে শুধু অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়।স্ট্রোকের সময় মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে রক্তের সরবরাহ ঠিকমতো হয় না, যার ফলে স্মৃতি নষ্ট হয়। স্ট্রোক থেকে সেরা ওঠা রোগীদের গুছিয়ে ভাবা বা সঠিকভাবে সব কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

গবেষকদের উদ্দেশ্য ছিল, অ্যাসপিরিন ট্যবলেটের সঙ্গে জিঙ্কো বিলোবা খাওয়ালে স্ট্রোকে আক্রান্ত মস্তিষ্কের ক্ষতি সামলে ওঠা সম্ভব হয় কিনা, সেটা দেখা। এর আগে প্রাণীদের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে জিঙ্কো বিলোবা মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্নায়ু কোষের মৃত্যু ঠেকাতে পারে। এর কারণ সম্ভবত মস্তিষ্কের ধমনীগুলোতে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এ ভেষজ।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জিঙ্কো বিলোবা খাওয়ার পর রোগী কথা বলার জড়তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে ও পেশীর শক্তি অনেক দ্রুত ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছে।

তবে গবেষকরা স্বীকার করেছেন, যথেষ্ট দীর্ঘ সময় তারা রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেননি। রোগীরা জানতেন কাকে কোন দলে রেখে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, যা হয়ত ফলাফলেও ওপর প্রভাব ফেলে থাকতেও পারে।

গবেষকরা বলেছেন, জিঙ্কোর যে নির্যাস তারা এই গবেষণায় ব্যবহার করেছেন তাতে ক্ষতিকরা রাসয়নিকের মাত্রা ছিল আগে ব্যবহার করা নির্যাসের তুলনায় অনেক কম। পরীক্ষার সময় খুবই কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছেন তারা।

পরীক্ষামূলক চিকিৎসার পর রোগীদের দু’ভাগে ভাগ করে তাদের স্বস্থ্যের অবস্থা প্রায় দু’বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। জিঙ্কো বিলোবা ব্যবহারকারীদের মধ্যে কোনোরকম নেতিবাচক ফল দেখেননি বা তাদের উপসর্গ কোনোভাবে ফেরত আসেনি। কিন্তু যাদের শুধু অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল তাদের কারও কারও আবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

গবেষকরা বলেছেন, এই গবেষণায় যে ফল পেয়েছেন, তাতে তারা আশাবাদী। এটা নিয়ে তারা আরও গভীর গবেষণা করতে চান। ব্রিটেনে কোন কোন দোকানে এই ভেষজ ওষুধ পাওয়া যায়। তবে চীনে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও অবসাদের চিকিৎসায় এ ওষুধ ব্যবহার হয়।

সূত্র: বিবিসি।