গ্যাস সংকটে শুরু হচ্ছে না হবিগঞ্জের বিদ্যুৎ উত্পাদন

ঢাকা: প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেয়ে উত্পাদন শুরু করতে পারছে না হবিগঞ্জের শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুেকন্দ্র। পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প পরিসরে কেন্দ্রটি পরিচালনে যে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তার জন্যও পার্শ্ববর্তী দুইটি বিদ্যুেকন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরোদমে এটি চালু করতে হলে ওই দুই বিদ্যুত্ কেন্দ্র বন্ধ রাখাসহ হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার অন্যান্য গ্রাহককে গ্যাসের চাপজনিত সমস্যায় ভুগতে হবে। তাই নতুন এই কেন্দ্রটিতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে গ্যাস বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড।
বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, ২০১২ সালে শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুত্ উত্পাদনের কথা থাকলেও কয়েক দফা মেয়াদ বেড়ে চলতি বছরের মে মাসের দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে এখনো পেস্টিংসহ কিছু কাজ চলছে। যৌথভাবে প্রকল্পে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে চীনের গুয়াংডং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক পাওয়ার ডিজাইন ইনস্টিটিউট। প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এইচএসবিসি ব্যাংক।
পূর্ণ সক্ষমতায় এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য দৈনিক ৫০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে ৭০ মেগাওয়াট ও ৫০ মেগাওয়াটের আরও দুইটি গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রে। পরীক্ষামূলকভাবে ৩৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুেকন্দ্রটি থেকে ১০০ থেকে ১৩৫ মেগাওয়াটের কিছু বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদন চলাকালে এ দুইটি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। গত সোমবার ৩৩০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটিতে দিনে (রাতে নয়) ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদিত হয়। ওইদিন ৭০ ও ৫০ মেগাওয়াটের দুইটি কেন্দ্রে গড়ে ৪০ থেকে ৪৪ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত্ উত্পাদন হয়। এই তিনটি কেন্দ্রে একযোগে বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য দৈনিক গড়ে ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।
তবে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি সূত্র জানায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় বর্তমানে দৈনিক গ্যাস বিক্রির পরিমাণ ২৫০ থেকে ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৪টি বিদ্যুেকন্দ্র এবং ১১০টি ক্যাপটিভ পাওয়ার রয়েছে। সব মিলিয়ে কোম্পানির মোট গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ৭১২ জন। এই তিনটি কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হলে সার কারখানা, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প, বাণিজ্যিক, চা-বাগান, সিএনজি ও গৃহস্থলী গ্রাহকরা গ্যাস সংকটে পড়বে। তাই নতুন এই কেন্দ্রটি উত্পাদন শুরু করতে চাইলে, গ্যাস সঙ্কটের কথা জানিয়ে উত্পাদন সীমিত রাখার অনুরোধ জানায় জালালাবাদ গ্যাস।
গত ৮ আগস্ট ইস্যুকৃত চিঠিতে বলা হয়, উেস গ্যাসের স্বল্পতা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে এবং পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুেকন্দ্রে ২৬ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়। এই গ্যাস সরবরাহ করতে গেলে পার্শ্ববর্তী ৭০ ও ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কেন্দ্রও বন্ধ রাখতে হবে। ২৬ এমএমসিএফডির বেশি গ্যাস ব্যবহার করলে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার সকল শ্রেণির গ্রাহককে গ্যাসের চাপের সমস্যায় ভুগতে হবে।
এ প্রসঙ্গে শাহজীবাজার বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্র তৈরি করে যদি তা শুরু করা না যায় তবে তা দুঃখজনক। আরো বিদ্যুত্ সরবরাহের জন্য নতুন বিদ্যুেকন্দ্র তৈরি করা হয়। কিন্তু বন্ধ করে দেয়ার আগের দুইটি থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পাদিত হত সেই পরিমাণ বিদ্যুত্ই যদি নতুন কেন্দ্র থেকে উত্পাদিত হয় তবে আর নতুন কেন্দ্র কেন? আবার বিদ্যুেকন্দ্র তৈরি করে তা বন্ধ রাখলে মেশিনারিজের ক্ষতি হয়। তাই এখন পালাক্রমে তিনটি কেন্দ্র চালানো হবে। যেদিন ৩৩০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটিতে পরীক্ষামূলক উত্পাদন হবে ওই দিন ৫০ ও ৭০ মেগাওয়াটের দুইটি কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সব মিলিয়ে কেন্দ্রটি এখনই চালু করা যাচ্ছে না।
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, গ্যাস বিতরণে আমাদের কোনো আপত্তি নেই বরং এটিই আমাদের দায়িত্ব। তবে উেস গ্যাসের স্বল্পতা ও অবকাঠামো সীমাবদ্ধতার কারণে সার্বিক সেবার দিক বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে।