সেই প্রতারক শ্যামল কান্তি দুর্নীতির দায়ে কারাগারে

না’গঞ্জ: ইসলাম অবমাননার অপরাধে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হওয়া না’গঞ্জের প্রতারক শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে এক ঘুষের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে না’গঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত আজ বুধবার এই আদেশ দেয় বলে পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকন জানান।

না’গঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যাণদীতে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক মোর্শেদা বেগম এই মামলার বাদী। আর আসামি প্রতারক শ্যামল কান্তি ভক্ত ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মোর্শেদা বেগমের অভিযোগ, চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে তার কছে থেকে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েও শ্যামল কান্তি তা করে দেয়নি। টাকা ফেরত চাইলে তা দিতেও অস্বীকার করেছে প্রতারক শ্যামল কান্তি।

২০১৬ সালের ১৩ মে ওই স্কুলে ইসলাম অবমাননার অপরাধে প্রতারক উগ্র হিন্দু শ্যামল কান্তিকে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনায় সারাদেশে নাস্তিক ও হিন্দুর দালালরা হৈচৈ করে। ওই ঘটনার পর বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ ইসলামবিদ্বেষী উগ্র হিন্দু শ্যামলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। নাস্তিক ও হিন্দুর দালালরা সে সময় স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে দৃঢ়ভাবে বলেন, শিক্ষককে নয়, সাম্প্রদায়িকতাবদী নাস্তিককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। দালাল মিডিয়া এ ঘটনায় সাম্পদায়িক হিন্দুর পক্ষাবলম্বন করে।

এদিকে পরে হাইকোর্টের নির্দেশে কথিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে তদন্তকারীরা ইসলাম অবমাননা বা আল্লাহ পাককে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে সাজানো রিপোর্ট দাখিল করে। এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুকে শাস্তি দেয়ার ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানকে অপরাধী সাব্যস্ত করে কথিত তদন্ত প্রতিবেদনে।

এদিকে কান ধরে উঠ-বসের ঘটনার পরে ২৭ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থীকে মারধর ও শিক্ষক মোর্শেদাকে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে তিনটি মামলার আবেদন না’গঞ্জের আদালতে জমা পড়ে।

প্রাথমিক শুনানি করে আদালত প্রথম দুটি মামলার আবেদন খারিজ করে দিলেও মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়। সেই তদন্ত শেষে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ গত ১৭ এপ্রিল উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দু শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেই অভিযোগপত্র আমলে নিয়েই আদালত আজ বুধবার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়। বাদীপক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান। শ্যামল কান্তির পক্ষে ছিলো সাখাওয়াত হোসেন খান। আদেশের পর সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৬১/৪১৭/৪০৬/৪২০ ধারায় অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।” অন্যদিকে শ্যামল কান্তির আইনজীবী সাখাওয়াত বলেছে, “আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”

প্রতারক শ্যামল কান্তি কারাগারে:

জামিন আবেদন নাকচ করে না’গঞ্জের কুখ্যাত প্রতারক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঘুষ গ্রহণের এক মামলায় না’গঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত আজ বুধবার বিকেলে এই আদেশ দেয়।

এর আগে আজ বুধবার দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করে না’গঞ্জের বন্দর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতারক শ্যামল কান্তি। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই মোর্শেদা বেগম নামে ওই স্কুলেরই এক শিক্ষিকা বাদি হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।