চার দেশীয় সড়ক প্রকল্প: ভারত প্রস্তুত, এখনো শুল্ক নির্ধারণ করতে পারেনি বাংলাদেশ

Image result for indian roads

ঢাকা: বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে ভারত পুরো প্রস্তুতি নিলেও শুল্ক নির্ধারণে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ। এধাধিকবার শুল্ক নির্ধারণে ট্রানজিট বিষয়ক কোর কমিটি, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয় ও ট্রানজিট ফি নির্ধারণ-সংক্রান্ত যৌথ কারিগরি কমিটি (জেটিসি) আলোচনা করলেও শুল্ক নিধারণে চুড়ান্ত সিধান্ত নিতে পারেনি তারা। বিষয়টি কবে চূড়ান্ত করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

সূত্র জানায়, প্রথমে ট্রানজিট বিষয়ক কোর কমিটি সড়ক পথে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রতিটন পণ্য পরিবহনের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ৪ টাকা ২৫ পয়সা চার্জ আদায়ের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু কোর কমিটির প্রস্তাব উপেক্ষা করে তা ১ টাকা ২ পয়সা নির্ধারণ অর্থাৎ প্রস্তাবিত শুল্কের ৭৬ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে আপত্তি তুলে পুনরায় প্রস্তাব দিতে বলেছে ট্রানজিট ফি নির্ধারণ-সংক্রান্ত যৌথ কারিগরি কমিটি (জেটিসি)। বিষয়টি কবে চূড়ান্ত করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

এদিকে চার দেশীয় এই সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে শত কোটি ডলারের প্রকল্প অনুমোদন করেছে ভারত। এ প্রকল্পের আওতায় চার দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে ৫৫৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়ন করবে দেশটি। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য ৬০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভারত এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিভাগ অনুমোদন করেছে। এতে ৫০ শতাংশ অর্থায়ন করবে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্পের আওতায় ভারতের অংশে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও মনিপুর। আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভারতের সড়ক যোগাযোগ ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লিনা নন্দন সাংবাদিকদের বলেছেন, এ প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য বিবি আইএনের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগ উন্নয়ন। প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি মহাসড়ক চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রকল্পের আওতায় ১৩ কোটি ডলার ব্যয়ে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁও পর্যন্ত সড়ক প্রশস্থ, দেড় কোটি ডলার ব্যয়ে শিলিগুঁড়ি-মিরিক-দার্জিলিং সড়ক উন্নয়ন এবং ২৫ কোটি ডলার ব্যয়ে কলকাতার উপকন্ঠে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবার থেকে ১২৩ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি করা হবে। এছাড়া ৫১ কোটি ডলার ব্যয়ে মনিপুর রাজ্যের দুটি মহাসড়ক উন্নয়ন করা হবে।

চার দেশের মধ্যে নিয়মিত যাত্রীবাহী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচলের জন্য গত বছর জুনে যোগাযোগমন্ত্রী পর্যায়ে মোটর ভেইক্যাল এগ্রিমেন্ট (এমভিএ) সই হয়েছিল। ভুটান ছাড়া বাকী দেশগুলো এই চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে। ভুটানও চলতি বছরের মধ্যে চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অন্যদিকে চার দেশীয় এই সড়ক যোগাযোগে বাংলাদেশের লাভের খাতা শূন্যই থাকবে। আর লাভের পুরোটাই ভারত ঘরে তুলবে- এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চারদেশীয় সড়ক যোগাযোগের মোড়কে ভারতীয় যান চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হবে ৪০ হাজার কোটি থেকে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। নামে ‘চারদেশীয় কানেকটিভিটি’ বা বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপাল) বলা হলেও থিম্পুতে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ভারতের মাত্র তিনটি শহরেই সীমাবদ্ধ থাকছে বাংলাদেশের যানবাহন চলাচল।

অপরদিকে ভারত বাংলাদেশের ভূখ-ের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের দুই সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে ভারত।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট বা কানেকটিভিটি- আমরা যে নামেই বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করি না কেন, মূল বিষয় হচ্ছে একটি- এই মুহূর্তে ভারতের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপন। আর এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখ-। এতে একতরফাভাবে ভারতই লাভবান হচ্ছে। বিশ্বের অন্য অঞ্চলের কানেকটিভিটি ঠিক এমনটি নয়। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে ‘বিবি আইএন’ (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপাল) চুক্তি স্বাক্ষর হয়।