অভ্যুত্থান রাতের বর্ণনা দিলেন এরদোয়ান

ঢাকা: তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের সেই রাতে কী করছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান? কিভাবে তিনি বিমানযোগে চলে এলেন ইস্তাম্বুলে- সিএনএন’র সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

তিনি জানান, রাতে সেনাদের অভ্যুত্থান চেষ্টার সেই সময়টিতে রাজধানী আঙ্কার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুলে ছিলেন না প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তুরস্কের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মার্মারিসে পরিবার নিয়ে অবকাশ যাপনে ছিলেন তিনি। অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসেন ইস্তাম্বুলে।

তিনি জানান, স্ত্রী এবং নাতি-নাতনী নিয়ে মার্মারিসে অবস্থান করছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে তার কাছে খবর আসে, ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা এবং আরো কিছু শহরে ‘কিছু নড়াচড়ার’ খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিবার এবং কাছের লোকদের নিয়ে নিরাপদ কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা নেন তিনি।

যখন তারা বিমানে ছিলেন, তখন ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক বিমান বন্দরের এয়ার কন্ট্রোল টাওয়ার বিদ্রোহী সেনাদের দখলে। বিমান বন্দরের বাতিগুলো নিভানো দেখতে পেয়ে তিনি এবং পাইলট মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বিমানের বাতি জ্বালিয়েই অবতরণ করবেন তারা।

এরদোয়ান জানান, ইতিমাধ্যে তার অনুগত বাহিনী এয়ার কন্ট্রোল টাওয়ারের পুনর্দখল নিয়ে নেয় এবং তিনি নিরাপদেই অবতরণ করেন। তবে তারা খুব জোরে একটি শব্দ শুনতে পান। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন অবতরণ করলাম সেই মুহূর্ত থেকে কয়েকটি ‘এফ সিক্সটিন’ জঙ্গিবিমান আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়তে শুরু করে। এগুলো ভূমির খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল।’

আঙ্কারা এবং ইস্তাম্বুলের রাস্তায় তখন বিদ্রোহীদের ট্যাঙ্কের মহড়া চলছে। টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ায় তিনি অ্যাপল’র সফটওয়ার ফেসটাইম ব্যবহার করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। আর সেই ভাষণটি জনগণকে দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সিএনএন’র একজন সাংবাদিক।

ভাষণে এরদোয়ান বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘রাজপথ দখল করুন এবং তাদের সমুচিত জবাব দিন।’ এরদোয়ান আরো বলেন, ‘এই কঠিন অগ্নিপরীক্ষার মধ্যেও আমার এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি যে আমি আর প্রেসিডেন্ট নেই।’

১২ ঘণ্টার মধ্যেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যায় এবং সরকার কঙ্ক্ষিত ফল পেয়ে যায়। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান এরদোয়ান। তিনি অভ্যুত্থানের নাটক সাজিয়েছেন- এমন অভিযোগ উড়িয়ে দেন তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, তার সরকার সঠিক কাজই সব সময় করে এসেছে। কোনো অত্যাচারী শাসক জনগণের ৫২ শতাংশ সমর্থন পেতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সিএনএন’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, স্বাধীন গণমাধ্যমের ব্যাপারে তার কোনো বাধা নেই। কিন্তু অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত চক্রান্তকারীদের সঙ্গে পক্ষে যদি কেউ কাজ করে তবে তাদেরও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। -সিএনএন