‘ইলেকশন আমার পোলারে খাইয়া হালছে’

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ট্রলির ওপর রাখা ছেলে শাজাহানের (৫২) নিথর দেহ। এর সামনে বসে বিলাপ করছিলেন বয়োবৃদ্ধ জননী আছিয়া খাতুন (৮০)। বারবার বলছিলেন, ‘আল্লাহ আমার পোলারে লইয়া গেলা গা। ইলেকশন আমার পোলারে খাইয়া হালছে। আমার বাপরে ফিরাইয়্যা দেও।’ ঢুকরে কাঁদছে শাহজাহানের স্বজনেরাও। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ। যারা সান্ত¡না দিতে আসছেন ভিজে আসছে তাদের চোখও। শনিবার (০৪ জুন) দুপুরে এ মর্মন্তুদ দৃশ্যই চোখে পড়লো সেখানে গিয়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপুরে গফরগাঁওয়ের সালটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী মোশাররফ হোসেন (মোরগ) ও আব্দুল করিমের (তালা চাবি) সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়।

এ সময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান ওই ইউনিয়নের বাগুয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান (৫২)। শাহজাহান কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নিহত শাহজাহানের স্বজনেরা জানান, শাহজাহান দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। এ সময় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে দুপুর আড়াইটার দিকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কান্নাজড়িত কন্ঠে শাজাহানের ভাই জুয়েল (২৫) বলেন, ইউপি সদস্য প্রার্থী করিমের লোকজনের হামলায় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

‘সংঘর্ষের সময় দৌড় দিলে তাকে মারপিট করে তারা। আহত অবস্থায় আমার ভাই রাস্তায় পড়ে থাকে। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলে তিনি মারা গেছেন।’

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আশিক মাহমুদ জানান, দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় হার্ট অ্যাটাকে শাহজাহানের মৃত্যু হয়। তাকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে আনা হয়। শরীরেও আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই।’