কথিত ধর্মগুরুদের ভ্রান্তির জালেই কি আটকা পড়ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম?

বাহাউদ্দীন চিশতি: আইএস বা সন্ত্রাসবাদী অশুভ শক্তি আমাদের দেশের উচ্চবিত্তদের সন্তানদের কেন টার্গেট করছে? ছেলেগুলো নিখোঁজ হওয়ার পরে কোথায় যায়? কারা নিয়ে যায়? কি ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়? তারা আত্মঘাতি স্কোয়াড-এ পরিণত হয় কি করে? তাদের চেহারা সূরতসহ চারিত্রিক পরিবর্তন, চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন এত দ্রুত কি করে ঘটে থাকে?

নিহত হামলাকারীদের পূর্বের ছবিগুলোর সাথে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আইএস পোশাক পরিহিত ছবিগুলোর সাথে তুলনা করলে যে পার্থক্যটি সবার ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে তা হলো- নিখোঁজ হওয়ার পর বা সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার আগে চেহারার যে লাবন্যতা, মাধুর্যতা ছিলো, তা অস্ত্রধারী আইএস পোশাকে দেখা যায়না।

ছবি: (বায়ে) আইএস পোশাক পরহিত ছবিতে রোহানের চেহারা, (ডানে) নিখোঁজ হওয়ার আগের ছবিতে রোহান

আরো উদ্বেগের বিষয়টি এখন ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে গেছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রোহান এবং নিবরাস দু’জনই ভ্রান্ত সালাফী মতবাদের প্রচারক ড. জাকির নায়েকের অনুসারি ছিলো। ড. জাকির নায়েক ছাড়াও আনজিম চৌধুরী এবং শামী উইটনেসের ধর্মীয় মতাদর্শও খুব কট্টরভাবে অনুসরণ করতো তারা। আর নিহত শফিকুল ইসলাম ছিলো তাবলীগপন্থী।

ছবি : আনজেম চৌধুরী (বায়ে), ড. জাকির নায়েক (মাঝখানে) ও শামী উইটনেস (ডানে)

আনজিম চৌধুরী একজন আইনজীবী। সোসাইটি অব মুসলিম ল ইয়ার্সের চেয়ারম্যান, ইসলাম ফোর ইউকের মুখপাত্র। টেলিগ্রাফের ২৮ জুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আনজিমকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে। ইউটিউবে বিতর্কিত বক্তৃতা আপলোডের অভিযোগও আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালের ২৯ জুন থেকে গত বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত ‘খিলাফতে’র পক্ষে পোস্ট করেন তিনি। আনজিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হয় সে ইরাক ও সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে তার সমর্থকদের উৎসাহ দিয়েছেন।

জাকির নায়েক হাল জামানার একজন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা। তরুণ প্রজন্ম তাকে এ যুগের নবী বলতেও দ্বিধাবোধ করেনা।যদিও জাকির নায়েক ভ্রান্ত সালাফি মতবাদের প্রচারক। তিনি ভারতে সালাফি মতাদর্শের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। মুম্বাইভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নায়েক। মালয়েশিয়ায় যে ১৬ জন ইসলামিক স্কলারকে নিষিদ্ধ করা হয় তার মধ্যে জাকির নায়েকও রয়েছেন। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মালয়েশিয়ার ‘মালাই অনলাইন’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়া-ভারতীয় ৪০টি সংগঠন পুনরায় জাকির নায়েক যাতে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি না পায় তার জন্য স্বাক্ষর করে। জাকির নায়েক মালয়েশিয়া গেলে তা দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে বলে জানানো হয় সংগঠগুলোর পক্ষ থেকে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম চ্যানেল ফোর নিউজের খবর অনুযায়ী, ভারতের পুলিশ শামী উইটনেসকে গত বছরের জুনে গ্রেফতার করে। আইএসের পক্ষে এককভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী টুইটকারী তিনি। এই অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৪ সালে চ্যানেল ফোর নিউজের একটি অনুসন্ধানী দল মূল রহস্য বের করে তা প্রকাশ করে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আনজিম চৌধুরী এবং শামী উইটনেস সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের হয়ে লোক নিয়োগ দিতো। ২২ বছর বয়সী সন্ত্রাসী নিবরাস ইসলাম এই দুই ধর্মগুরুকে সামাজিক মাধ্যম টুইটারে অনুসরণ করছে ২০১৪ সাল থেকে। নিহত রোহান ইমতিয়াজের ফেসবুক একাউন্টে দেখা গেছে গত বছর জাকির নায়েকের পিস টিভির হয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়েছিলো সে। এছাড়া তাবলীগ জামাতের মাধ্যমেও জঙ্গিবাদের দিকে লোক সংগ্রহ করা হয় বলে জানা যায়।

তাহলে এই কথিত ধর্মগুরুদের নেটওয়ার্কের জালেই কি আটকা পড়ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম?

লেখক: ব্লগার ও গবেষক