বিবাহ বিচ্ছেদ: রাজধানীতে বছরে ভাঙছে ৫১৪৩ পরিবার

ঢাকা: রাজধানীতে প্রতিবছর ৫ হাজার ১৪৩টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। দুই সিটির তালাক রেজিস্ট্রি দফতর সূত্র জানিয়েছে- দিনদিন ভয়াবহ আকারে বেড়েই চলেছে বিবাহ বিচ্ছেদ। ঢাকায় এর প্রবণতা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এরমধ্যে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে প্রভাবশালী পরিবারও রয়েছে। বিচ্ছেদের দুই-তৃতীয়াংশ নোটিশই আসছে নারীর কাছ থেকে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজধানীতে বছরে ৫ হাজার ১৪৩ পরিবারে বিচ্ছেদ ঘটছে। ঢাকা শহরের তুলনায় সারাদেশে এই চিত্র আরো ভয়াবহ।
বিবাহ বিচ্ছেদের নেপথ্যে নানা কারণ দেখছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, দ্বীন ইসলাম বহির্ভুত অবৈধ সম্পর্ক, কথিত নারীস্বাধীনতা, বেপর্দা, অশালীন নাটক, সিনেমা, নির্যাতন, মাদকাসক্ত, সন্দেহপ্রবণতা, একে অপরের অবাধ্য হওয়া, পুরুষ নির্ভরশীলতা কমে যাওয়া, শূন্যতা বিরাজ করা, তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার, পরকীয়া ও সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। এছাড়া আধুনিকতার নামে পশ্চিমা জীবন অনুকরনের বিষয়ও রয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশনের ১০ অঞ্চলের হিসাব মতে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে রাজধানীতে ৩৬ হাজার ৩৭১টি বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নোটিশ কার্যকর হয়েছে ৩০ হাজার ৮৫৫টি। দেখা যাচ্ছে, এ সময়ে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৮০৩টি এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ দেয়া হয়েছে ১২ হাজার ১৮টি। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি, মাসে ৪২৯টি এবং বছরে পাঁচ হাজার ১৪৩টি সংসার বিচ্ছেদ ঘটছে। এর মধ্যে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেয়ার পরিমাণ ৬৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পরিমাণ ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।
একই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫টি অঞ্চলে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৭৮৭টি। এর মধ্যে পুরুষের পক্ষ থেকে ৪ হাজার ৯৯৯টি, আর স্ত্রীর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৮০৩টি। নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৮টি এবং কার্যকর হয়েছে ১৪ হাজার ২৩৪টি।
একই সময়ে উত্তর সিটির ৫টি অঞ্চলে ২০ হাজার ৫৮৪টি তালাকের নোটিশ পড়েছে। এর মধ্যে পুরুষের পক্ষ থেকে ৭ হাজার ১৯টি এবং নারীর পক্ষ থেকে ১৩ হাজার ৪৬৫টি নোটিশ পড়েছে। নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৪৬৫টি এবং কার্যকর হয়েছে ১৬ হাজার ৬২১টি। ঠিকানা ঢাকার বাইরে হওয়ায় তিন হাজার ৫১৮টি নোটিশ কার্যকর করা যায়নি।
এ বিষয়ে ডিএসসিসি’র অঞ্চল-২-এর নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নঈম বলেন, ‘তালাকের বিষয়টি পর্যালোচনা করে যেটা দেখেছি তা হচ্ছে, তালাকদাতাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী। আমার এলাকায় (অঞ্চল-২) বছরে গড়ে পাঁচশ’র বেশি বিচ্ছেদের নোটিশ পড়ছে। তালাকদাতা নারীদের অধিকাংশের বয়স ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনও সমস্যা নেই, যেটা কোনও সমাজে ঘটে না। তবে মাত্রাগত পার্থক্য আছে। আমাদের দেশে এই সমস্যাটি (বিবাহ বিচ্ছেদ) বেশি ঘটছে। তার মূল কারণ হচ্ছে, অনেক বেশি স্বাধীন চেতা, উপার্জন বাড়া, একে অপরের সঙ্গে খরাপ আচরণ করা। এছাড়া সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও জৈবিক কারণেও বিচ্ছেদ ঘটছে।’