বিমানবন্দরে নিরাপত্তা তল্লাশি শিথিলের দাবি নাকচ

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন

নিউজ ডেস্ক : দেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বিচারপতি, সংসদ সদস্য (এমপি), বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীদের আলাদা পরিবেশে চেকআপে ‘কিছুটা’ ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তারা বলেছে, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) আইন ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে এ ধরনের কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কমিটির সভাপতি র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক এবং সৈয়দা রুবিনা আক্তার বৈঠকে অংশ নেন।

বেবিচকের সহকারী পরিচালক (অর্থ বিভাগ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং পরিচালক (পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ সাঈদ হোসাইন মুরাদী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়।

এর আগে ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বিচারপতি, সংসদ সদস্য, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীদের আলাদা পরিবেশে চেকআপে ‘কিছুটা’ ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে পরে সমালোচনার মুখে পরে কমিটি। এমনকি দেশের বিমানবন্দরগুলোতে সংসদ সদস্যসহ ভিআইপিদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তল্লাশি শিথিল করতে কমিটির অনুরোধ অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তা অগ্রাহ্য করার আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বেবিচকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায় বাংলাদেশের সব বিমানবন্দর বিশেষত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে আইসিএও প্রণীত এনেএক্স-১৭ অনুযায়ী প্রিভেন্টিভ সিকিউরিটি মেজার নেওয়া বাধ্যতামূলক। আইসিএওর আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের আগে সিকিউরিটি স্ক্রিনিং করার বাধ্যবাধকতা, যা প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র প্রতিপালন করে। এছাড়া ওই আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী বিমানবন্দরে এয়ার সাইডে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিমানের যাত্রী ও কেবিন চেকিং, হোল্ড ব্যাগেজ স্ক্রিনিং কার্গো, মেইল এবং অন্যান্য পণ্যের নিরাপত্তা চেকিং এবং বিশেষ ধরনের যাত্রীদের জন্য অনুচ্ছেদ ৪.৭ অনুসরণ করা হয়।

আইসিএওর রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য ন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি প্রোগ্রাম বা এনসিএএসপি প্রণীত হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এনসিএএসপি অনুসরণ করে নিরাপত্তা কার্যক্রম গ্রহণ করে।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনার অভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তা চেকিং নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায়শই বিব্রত হচ্ছেন। যদিও এনসিএএসপি অনুযায়ী কেউই নিরাপত্তা চেকিংয়ের আওতামুক্ত নন। ন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি প্রোগ্রামের নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা তল্লাশি হতে রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার, জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিরাপত্তা চেকিং থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ওই আইনের আওতায় জাতির জনকের পরিবারের সদস্যরা, রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপতি পরিবারের সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ/স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তা চেকিংয়ের বাইরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী এক্সাম্পট ফ্রম সিকিউরিটি স্ক্রিনিংয়ের আওতাভুক্ত ব্যক্তির বাইরে বিমানবন্দর তথা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ওই তালিকার বাইরে সরকার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রদান করা হলে তা প্রতিপালন করা হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কমিটির সভাপতিকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তবে কমিটির সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, বেবিচক আমাদের আন্তর্জাতিক আইন দেখিয়েছে। বলেছে নিরাপত্তার কথাও। এজন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তা মেনে নিয়েছি। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা তো কিছু বলতে পারি না।

এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পুনঃসংস্কার কাজের সাথে কোন প্রতিষ্ঠান জড়িত, কত টাকা ব্যয় হয়েছে, টেন্ডার কোন প্রক্রিয়ায় দেয়া হয়েছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কমিটিতে প্রেরণের সুপারিশ করা হয়। ঢাকাও আইসি সিটি অব ট্যুরিজম হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় ঢাকা শহরের সব পর্যটন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক একটি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া বাংলাদেশে পর্যটনকে আরো শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় করতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া বৈঠকে উল্লেখ করা হয় যে, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় এক্সক্লুসিভ ইকোট্যুরিজম জোন করার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অনুকূলে জমি বন্দোবস্ত দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তাছাড়া সুন্দরবনের পরিফেরিতে পর্যটন জোন স্থাপনের জন্য বুয়েট কর্তৃক পর্যটন সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।