‘জঙ্গিবাদ হারাম’ ফতোয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ কয়েকটি গুপ্ত হত্যার প্রেক্ষাপটে কিছুদিন আগে ইসলামের ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হয়। ধর্মের নামে মানুষ হত্যাকারীরা জাহান্নামে যাবে-এ ধরণের দশটির মতো ফতোয়া ছিলো তাতে।

কিশোরগঞ্জের সুপরিচিত শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ এই ফতোয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে আলেম ওলামাদের একটা অংশের সাথে পুলিশের আইজির এক বৈঠক থেকে এই উদ্যোগের শুরু হয়েছিলো বলে খবর প্রকাশ হয়েছিলো।

কয়েকমাস ধরে সারা দেশের এক লাখ আলেম-ওলামার সই নিয়ে তিনি এই ফতোয়া ঘোষণা করেন।

কিন্তু বাংলাদেশের আলেম ওলামাদেরই অন্য একটি বৃহৎ অংশ এই ফতোয়া তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

তাদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, ইসলামী আইনে বিশেষজ্ঞ মুফতিরাই শুধু ফতোয়া ঘোষণা করতে পারেন। সেখানে এক লাখ স্বাক্ষরকারীর বড় অংশ মুফতি না হওয়ায় এই ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হবে না।

মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘যাদের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে, তারা প্রত্যেকে মুফতি কিনা, বা তাদের সার্টিফিকেট আছে কিনা, সে বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। এখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে এক জায়গায় বসে কয়েক হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছে। এটা কেমন ফতোয়া? এটা কৃত্রিম কোনো বিষয় হলো কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।’

ইসলামী শরিয়ত বা বিধি বিধান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মুফতি বলা হয়, তারাই একমাত্র ফতোয়া দিতে পারেন-এমন যুক্তি দিচ্ছেন মুফতি ফয়জুল্লাহ।

এই বিতর্কের জবাবে ফতোয়া ঘোষণাকারী শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেছেন, নেহাতই রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে জঙ্গি বিরোধী ফতোয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে এই ফতোয়ার সংবাদ প্রকাশের পর অনলাইনে এনিয়ে ইসলামী বিশেষজ্ঞরাও নানা মতামত ব্যাক্ত করেছেন। কেউ কেউ এই ফতোয়াকে যুগান্তকারী ফতোয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেউ এর ভাষাগত ভুল ধরেছেন। ফতোয়াটিতে ‘জঙ্গিবাদ হারাম বলা হয়েছে কিন্তু সঠিক ভাষায় ফতোয়া হবে ‘সন্ত্রাসবাদ হারাম।’ তাদের মতে জঙ্গি শব্দটি ইসলামী যার অর্থ জিহাদ বা যুদ্ধ। কিন্তু ইসলামে জিহাদ হারাম নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে ফরয। সূতরাং সঠিক ফতোয়া হবে, সন্ত্রাসবাদ হারাম।