৯৯ দেশে বড় ধরনের সাইবার হামলা

ডেস্ক: বিশ্বের অন্তত ৯৯টি দেশের নজিরবিহীন বড় ধরনের সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার হয়েছে সমগ্র ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া। এসব দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘র‌্যা নসমওয়্যার’ ছড়িয়ে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে ডিজিটাল মুদ্রা ‘বিট কয়েনের’ মাধ্যমে ৩০০ ডলার করে চাওয়া হয়েছে। অনেক দেশের স্বাস্থ্য, টেলিকম বা যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত এই হামলার শিকার হয়েছে।

‘র‌্যা নসম’ না দিলে সমস্ত ডেটা, এনক্রিপশন উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নিমেষে। একেবারে যেন অপহরণের জন্য মুক্তিপণ চাওয়া! ‘র‌্যা নসম’ অর্থাৎ, মোটা অঙ্কের টাকা ও ‘ম্যালওয়ার’ মিলিয়ে এই হানার নাম দেয়া হয়েছে র্যা নসমওয়্যার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির নজরদারির কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের গলদ ধরেই হ্যাকররা এই কুকর্মে ঘটিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

জানা যাচ্ছে, ৯৯টি দেশের কম্পিউটার এই হামলা শিকার হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, স্পেন, ইটালি ও তাইওয়ান।

শুক্রবার এই ভয়াবহ ম্যালওয়্যার হানার পরই এক ধাক্কায় বসে গেছে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে বড় ধরণের হামলার মুখে পড়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস। দেশটির হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে রাখতে হয়।স্পেনের টেলিকম ও জ্বালানি কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলিভারি কোম্পানি ফেডএক্স এই হামলার শিকার হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার একটা বিরাট অংশ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মনে করেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্য পরিসেবায় আঘাত হানতেই এই দুষ্কর্ম করা হয়েছে।

‘র‌্যা নসমওয়্যার’ হচ্ছে এমন এক ধরণের ম্যালওয়ার বা ভাইরাস, যা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীকে প্রবেশে বাধা দেয়। অনেক সময় হার্ডডিস্কের অংশ বা ফাইল পাসওয়ার্ড দিয়ে অবোধ্য করে ফেলে। পরে ওই কম্পিউটারের নিয়ন্ত্র¿ণ ফেরত দেয়ার জন্য মুক্তিপণ বা অর্থ দাবি করা হয়। ‘ট্রোজান ভাইরাসের’ মতো এ ধরণের ম্যালওয়ার এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা অ্যাভাস্ট বলছে, তারা ওয়ানাক্রাই ও ভ্যারিয়্যান্ট নামের র্যা নসমওয়্যারের শিকার ৭৫ হাজার কম্পিউটার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। সংস্থাটির ম্যালওয়্যার বিশেষজ্ঞ জ্যাকব ক্রুসটেক বলছেন, এটি বিশাল একটি ঘটনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে মিল দেখা গেলেও, নির্দিষ্ট করে কোন লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা চালানো হয়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএর তৈরি করা একটি টুল ব্যবহার করে এই সাইবার হামলা চালানো হয়। গত এপ্রিলে শ্যাডো ব্রোকারস নামের হ্যাকাররা ওই প্রযুক্তিটি চুরি করে এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়।

ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির এই সফটওয়্যার তৈরির পর গত বছর অগস্ট মাসেই এটির ত্রুটি ধরা পড়েছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে মাইক্রোসফট সমস্যার সমাধান করেলও দেরি হয়ে গিয়েছিল। এপ্রিলেই নিজেদের ‘শ্যাডো ব্রোকার’ পরিচয় দিয়ে একদল হ্যাকার অনলাইনে প্রকাশ করে দেয় সেই সফটওয়্যার।

ঘটনার পর প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে এনএসএ। অনেক বিশেষজ্ঞই আবার ঘটনার জন্য এনএসএ-কে দায়ী করতে রাজি নয়। এনএসএ সঠিক সময় মাইক্রোসফটকে জানিয়েছিল বলেই দাবি করেছেন তারা।

শুক্রবার ঘটনা সামনে আসার পর মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘মার্চ মাসে আমরা এই সফটওয়্যারকে সুরক্ষিত করতে ও ম্যালওয়্যার আটকাতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। যারা আমাদের ফ্রি অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন ও উইন্ডোজ আপডেট এনেবল করেছেন তাদের কম্পিউটার সুরক্ষিত রয়েছে। কোনও অতিরিক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা আমরা দেখছি।’

যদিও, এনএসএ-র কাছ থেকে এখনও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, জানা যাচ্ছে যে, এই র‌্যা নসমওয়্যারে বিট কয়েনের যেসব ওয়ালেটে অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে, সেখানে নতুন করে মোটা অর্থ জমা পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাসস