কওমী শিক্ষার্থীদের সনদে স্বীকৃতির উদ্যোগে গতি

ঢাকা: কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনে তিন বছর আগে করা ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে একটি কমিটি করেছে সরকার।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম ট্রেনিং একাডেমির গবেষণা, প্রকাশনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা বিভাগের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে আহ্বায়ক করে মঙ্গলবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নয় সদস্যের এই কমিটির আদেশ জারি করে।

কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন- ২০১৩’ এর খসড়া বর্তমান সময়ের আলোকে ‘অধিকতর উপযোগী ও পর্যালোচনা’ করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মা’আরিফের মহাপরিচালক সুলতান ষওক নদভী, চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক আবদুল হালিম বোখারী, কিশোরগঞ্জের জামেয়া ইমদায়ারর মুহতামিম আনোয়ার শাহ এবং সিলেটের দক্ষিণকাছ হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস আব্দুল বাসেত বরকতপুরিকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

এছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম আবদুল কুদ্দুস, ঢাকার ইসলামী রিসোর্স সেন্টারের জ্যেষ্ঠ মোহাদ্দিস মুফতি এনামুল হক এবং খলনার জামিয়া মাদানীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইমদাদুল কাশেমী।

কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা অণুবিভাগ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে।

এই কমিটি প্রয়োজনে আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।
কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি দিতে সুপারিশ দেওয়ার জন্য ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল ১৭ সদস্যের ‘কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করে সরকার।

কওমী মাদ্রাসায় সকাল-বিকাল এভাবেই পাঠ্যদান করা হয়। (ফাইল ছবি) ওই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠায় ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন- ২০১৩’ এর খসড়া করা হয়।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় থেকে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের সনদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সভাপতি ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামীর আমীর শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে কমিশন গঠন করে।
ওই কমিশনের কো-চেয়ারম্যান হন শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। সদস্য সচিব করা হয় গোপালগঞ্জের গওহরডাঙা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রূহুল আমীনকে। কিন্তু এই দুই জন ‘সরকারসমর্থক’ বলে অভিযোগ করেন কমিশনের অন্য সদস‌্যরা।
পরে কো-চেয়ারম্যান-১ পদে মাওলানা আশরাফ আলীকে ও সদস্য সচিব পদে আবদুল জব্বারের নাম দিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করার দাবি জানান আহমদ শফী।
সেই সঙ্গে বেফাকের নামে কওমী সনদের স্বীকৃতি দেওয়া, বেফাককে অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় করা, সরকারি অনুদান গ্রহণ না করা ও কওমি মাদ্রাসার পাঠপদ্ধতি পরিবর্তন না করাসহ আটটি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
সরকারের সঙ্গে দুটি বৈঠকের পরেও এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আহমদ শফী কাউকে কিছু না জানিয়ে কমিশন থেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েন। পরে কমিশন তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।