তেহারিতে গরুর গোস্ত দেখে চারুকলার ক্যান্টিন দায়িত্বশীলকে মারধর

ঢাকা: পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে হিন্দু শিক্ষার্থীরা তেহারিতে গরুর গোস্ত খাওয়ার পর ক্যান্টিনের দায়িত্বপ্রাপ্তের উপর হামলা চালিয়েছে।

 

চারুকলার স্বেচ্ছাসেবীদের একজন জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য যারা রাতভর কাজ করেছেন, তাদের সকালের নাস্তা হিসেবে জাকিরের কাছ থেকে ‘তেহারি’ নেয়া হয়েছিল।

“আমাদের ক্যান্টিনে কখনও গরুর গোস্ত আসে না। কেউ জানত না যে তেহারি গরুর গোস্ত দিয়ে রান্না করেছে। খাওয়ার পর সন্দেহ হলে জাকিরকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন সে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ছুড়ে বলে, ‘গরুর গোস্ত ছাড়া তেহারী হয় নাকি?”

তাতে ক্ষিপ্ত হয়েই হিন্দু শিক্ষার্থীরা তার উপর হামলে পড়ে, ব্যাপক মারধর করে এবং ক্যান্টিন ভাংচুর করে।

এ বিষয়ে ক্যান্টিন মালিক জাকির বলেন, “পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে গরুর তেহারিও রান্না করা হয়।
“চারুকলার ছাত্র সোহাগ, সবুজ, মিঠুন সকালে ওই তেহারি খেয়ে কয়েক প্যাকেট নিয়ে যায়।”

তিনি বলেন, বৈশাখ উদযাপন প্রস্তুতির সময় সোহাগ, সবুজ, মিঠুনসহ উদযাপন কমিটির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন তার দোকানে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বাকি খায়।

“ওই বকেয়া টাকা পরিশোধ করবে না বলেই গরুর গোস্তের তেহারি বাইরে গিয়ে কয়েকজন হিন্দু ছাত্রকে খাইয়ে আমার বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে।”

তার এই অভিযোগ অস্বীকার করে চারুকলার ছাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক সোহাগ বলছেন, বাকি খাওয়ার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

নিজেরা খাওয়ার পর গরুর তেহারি কেন হিন্দু সহপাঠীদের দিলেন জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, “আমরা সারা রাত কাজ করার পর সকালে ওই তেহারি খেয়েছিলাম। তাই সেখানে গরুর গোস্ত রয়েছে কি না সেটি ওইভাবে খেয়াল করা হয়নি।”

জাকিরের আগে চারুকলার ক্যান্টিন চালাতেন মিজানুর রহমান নামে একজন। তিনিও বিভিন্ন সময়ে বকেয়া টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে না পাওয়ার অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, “গত বছর বৈশাখ প্রস্তুতির সময় আমার কাছেও তারা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বাকি খায়। পরবর্তীতে টাকা চাওয়ায় আমাকে ক্যান্টিন থেকে বের করে দিয়ে জাকিরকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়।”

এদিকে, ক্যান্টিনে গরুর তেহারি কেন রান্না করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান প্রক্টর আমজাদ আলী।

তিনি বলেন, “সে (জাকির) জানত না বলে এটা করেছে, না বেশি লাভের জন্য খাশির বদলে গরু দিয়েছে, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল- তা আমরা দেখব। তবে তাকে আর ক্যান্টিন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না।”

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির কর্মচারী জাকির হোসেন গত দুই বছর ধরে চারুকলার ওই ক্যান্টিন পরিচালনা করে আসছেন। তাকে আর ওই দায়িত্বে রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রক্টর আমজাদ আলী।

এ বিষয়ে জাকির বলেন, আমার আগে মিজানকেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে একই কারণে। ছাত্ররা হাজার হাজার টাকা  বাকি খাবে, আর টাকা পরিশোধ না করার জন্য ষড়যন্ত্র করে একটা কাহিনী সৃষ্টি করে পরে আমাদের সরিয়ে দিবে। এভাবেই আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ  করা হচ্ছে।